শরীরের ওজন গোড়ালির মাধ্যমে মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে বলেই আমরা স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি। তাই গোড়ালি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সন্ধি। মাঝেমধ্যে গোড়ালিতে ব্যথা বা প্রদাহ আমাদের কষ্টের কারণ হয়ে ওঠে।
অনেক সময় সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে পা মাটিতে ফেলতে গেলেই প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব হয়। একে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস নামেও অবহিত করা হয়।
এই ব্যথার কারণ হচ্ছে ক্যালকেনিয়াম স্পার (গোড়ালির নিচের হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি)। এর ফলে পায়ের তলার, বিশেষ করে হিল বা গোড়ালিতে সুচের মতো খোঁচা অনুভূত হয়। কিছুক্ষণ হাঁটাচলা করার পরে ব্যথা ধীরে ধীরে কিছুটা কমতে থাকে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা তো কমেই না, বরং পা একটু ভারী ভারী মনে হয়। এবং কিছুটা ফুলে যায়।
৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী মানুষের এমনটা বেশি হয়ে থাকে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের এই সমস্যার ঝুঁকি বেশি। গোড়ালি ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ এই প্লান্টার ফাসাইটিস বা ক্যালকিনিয়াম স্পার, তবে অন্যান্য কারণও আছে। যেমন—নানা ধরনের বাতরোগ, রগ বা টেন্ডনের সমস্যা, নার্ভের ইনজুরি, হাড়ের ক্ষয়ের কারণে হাড়ভাঙা, অতিরিক্ত ওজন, উঁচু ও শক্ত জুতা ব্যবহার ইত্যাদি।
গোড়ালির ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতির প্রচলন রয়েছে। এর মধ্যে ট্রিগার পয়েন্ট ইনজেকশন ইনফিক্সেশন পিআরপি এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অন্যতম চিকিৎসাপদ্ধতি। বর্তমান সময়ে গোড়ালির ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি ও শক ওয়েব থেরাপি একটি জনপ্রিয় চিকিৎসাপদ্ধতি।
কোনো কোনো সময় বিশ্রাম নিলেও গোড়ালির ব্যথা কমে যায়। বরফ বা আইসপ্যাক ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। আবার গরম পানির সেক দিলেও উপকার মেলে। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, নিচু নরম জুতা অথবা হিল কুশন ব্যবহার করতে হবে। আর্চজাতীয় জুতা ব্যবহার করতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে পারেন। একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু স্ট্রেচিং, এক্সারসাইজ করলে ব্যথা কমবে।
মো. সাইদুর রহমান, চিফ কনসালট্যান্ট (ফিজিও) রিঅ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, ফিনিক্স টাওয়ার, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ অ্যাভিনিউ, তেজগাঁও, ঢাকা।