কেন কাঁদবেন? জেনে নিন কান্নার ১০ উপকারিতা

কান্না মানুষের আবেগ প্রকা‌শের ভাষা। আবেগতা‌ড়িত হ‌য়ে কান্নাকা‌টি ক‌রেন‌নি, এ রকম মানুষ পাওয়া খুবই কঠিন। মাঝেম‌ধ্যে কান্নাকাটি করা খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। পরিসংখ্যান দেখা গে‌ছে যে নারীরা প্রতি মাসে পাঁচবার কাঁদেন আর পুরু‌ষেরা একবার। এই পার্থক্যটা সামা‌জিক ও লৈ‌ঙ্গিক কার‌ণে হয়ে থাকে।

চিৎকার ক‌রে বা নীর‌বে—যেভাবেই কান্নাকা‌টি করুন না কেন, দেখ‌বেন আপনার মন কিছুটা হালকা লাগ‌ছে
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

মানুষ কেন কাঁদে?

মানুষ অনেক কারণেই কাঁদতে পারে, কিন্তু মূল কারণটা হ‌লো আবেগ।

১. শারী‌রিক কারণ

কান্না আমাদের শরীরকে চাপ উপশম করতে সাহায্য করে, স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণ করে মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে।

২. মনস্তাত্ত্বিক কারণ

কান্নার মাধ্যমে দুঃখ, আনন্দ, হতাশার মতো আবেগ প্রকাশ ক‌রে মানুষ। আর মানুষ য‌দি কাঁদতে না পারত তাহ‌লে আবেগগু‌লো চাপা থাকার কার‌ণে মানুষ বি‌ভিন্ন জ‌টিলতায় ভুগত।

৩. সামাজিক কারণ

মু‌খে না বল‌লেও কান্নার মাধ্যমে অন্যদের কাছে আমাদের সমর্থন, সহানুভূতি, সান্ত্বনা প্রকাশ কর‌তে পা‌রি। এতে সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী হয়।

কান্নার ১০ উপকারিতা

ম‌নো‌বি‌দেরা বল‌ছেন কান্নাকা‌টি করাটা ‘হেল‌দি’। কান্নার পরে আমরা ভালো বোধ করি। কারণ, আবেগ ও চাপ থে‌কে মুক্তি দেয় কান্না। কান্নার বেশ কিছু উপকারিতা আছে, চলুন জে‌নে নিই:

১. প্রশান্তি এনে দেয়

চিৎকার ক‌রে বা নীর‌বে—যেভাবেই কান্নাকা‌টি করুন না কেন, দেখ‌বেন আপনার মন কিছুটা হালকা লাগ‌ছে। কারণ, কান্না আপনা‌কে প্রশান্তি দি‌তে পা‌রে। কান্না আমা‌দের প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে। যা স্নায়ু শিথিলীকরণের জন্য দায়ী বিভিন্ন হরমোনের নিঃসরণ, হজম ও সেরে ওঠার স‌ঙ্গে জ‌ড়িত। কান্নার ফলে এন্ডোরফিন বা ‘সুখী হরমোন’ নিঃসৃত হয়, যা প্রশান্তির অনুভূতি তৈরি ক‌রে।

২. ব্যথা উপশম করে

কান্নাকাটি করার ফ‌লে শরীরে এন্ডোরফিন উৎপন্ন হয়, যা কিছু কিছু ব্যথাও উপশম করে। কান্নাকা‌টি আপনার প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকেও সক্রিয় করে, যা শিথিলতা বাড়ায়, স্ট্রেস বা চাপ কমায় এবং ব্যথা উপশম করে।

৩. মুড ভা‌লো করে

ম‌নো‌বিদেরা ব‌লেন, কান্না আবেগ দমন ক‌রে আপনার মুড ভা‌লো করে দি‌তে পা‌রে। কান্নার মাধ্যমে আপনি প্রকারান্ত‌রে ক্ষতিকর হরমোনগুলো শরীর থেকে বের করে দিয়ে ফুরফুরে হয়ে ওঠেন।

কান্নাকা‌টি করার সময় আমরা দ্রুত নিশ্বাস নিই, এতে মস্তিষ্ক ‘ঠান্ডা’ হ‌য়ে অক্সিজেন নেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়।

৪. চাপ প্রশমিত করে

কান্না কর্টিসলের মতো স্ট্রেস-সম্পর্কিত রাসায়নিকগুলো বের করে দেয়, যা আপনার শরীরকে ধু‌য়েমুছে ‌ডিট‌ক্সিফাই ক‌রে। ফ‌লে মান‌সিক দু‌শ্চিন্তা দূর হ‌য়ে যায়।

৫. এনে দেয় প্রশান্তির ঘুম

অনেকক্ষণ ধ‌রে কান্নাকা‌টির ফ‌লে শরী‌রে বি‌ভিন্ন হর‌মোন নিঃসরণের পাশাপাশি প্রচুর শ‌ক্তি ক্ষয় হয়। মা‌ঝেমধ্যে পা‌নির ঘাট‌তি দেখা দেয়। যার ফ‌লে ম‌াথা ঠান্ডা হ‌য়ে একধর‌নের প্রশা‌ন্তি বোধ কর‌বেন, এটা আপনাকে শান্তিপূর্ণ ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম দি‌তে পারে। তাই ঘুমানোর আগে মা‌ঝেম‌ধ্যে একটু কান্নাকাটি করতেই পা‌রেন!

৬. ব্যাকটেরিয়ার বিরু‌দ্ধে লড়াই করে

চো‌খের পা‌নি‌তে লাইসোজাইম নামক একধর‌নের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এনজাইম রয়েছে। লাইসোজাইম ক্ষতিকারক জীবাণু ধ্বংস করে আপনার চোখকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা ক‌রে।

৭. চোখ‌ সুস্থ রাখে, উন্নত করে দৃষ্টিশক্তি

কান্নাকা‌টি চোখকে স্বাভাবিকভাবে পি‌চ্ছিল করে, শুষ্কতা প্রতিরোধ করে, কর্নিয়া থাকে আর্দ্র ও পরিষ্কার। ফলে সংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি কমে। চোখের জল ধুলাবালু ও অন্য বিরক্তিকর পদার্থগুলো ধুয়ে ফেলতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করে। এ ছাড়া নেত্রনালি সতেজ করে চোখকে আরাম দেয় কান্না।

কান্নাকা‌টি শিশুদের জন্যও উপকারী

৮. মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে

অনেক সময় বন্ধু বি‌য়োগ হ‌লে বা ব্রেকআপ হ‌লে আমরা কান্নায় ভেঙে প‌ড়ি। এ ধর‌নের অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে কান্না। তখন মানু‌ষের ম‌ধ্যে উত্তেজনা ও চাপ কাজ ক‌রে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ ক‌রে মানসিক ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করে কান্না।

৯.  বাচ্চাদের শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে ও ঘুমাতে সাহায্য করে

শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে কি কা‌রো ভা‌লো লা‌গে? কিন্তু কান্নাকা‌টি শিশুদের জন্যও উপকারী। এটি শিশু‌দের শ্বাসনালি পরিষ্কার করে। বে‌শি বে‌শি অক্সিজেন নি‌তে সহায়তা করে। এতে তার কষ্ট লাঘব হয়। ‘ছন্দোবদ্ধ’ কান্না শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ঠিক বড়‌দের ম‌তোই কান্নাকা‌টির পর শিশু‌দের চাপ ও দুশ্চিন্তা ক‌মে যায়, ফ‌লে সে রিল্যাক্সড হয়। ঘুম ভা‌লো হয়।

১০. সামাজিক বন্ধন

মু‌খে না বলেও কান্নার মাধ্যমে অন্যদের কাছে আমাদের সমর্থন, সহানুভূতি, সান্ত্বনা প্রকাশ কর‌তে পা‌রি। এতে সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী হয়।
ত‌বে আপনি যদি প্রায়ই কান্নাকাটি করেন আর এটি যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে বা উদ্বেগের কারণ হয়, তাহলে একজন মনো‌বি‌দের শরণাপন্ন হ‌তে পারেন।

সূত্র: ভে‌রিও‌য়েল হেলথ