এডিস ইজিপ্টাই নামের মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কাউকে কামড়ালে চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে তাঁর জ্বর হয়। আক্রান্ত এই ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেটিও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়ায়।
ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের—ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার ও ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার। বেশি তীব্র হলে তাকে ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’ বলে।
ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের। তাই ডেঙ্গু জ্বরও চারবার হতে পারে। যাঁরা আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু হলে তা মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর (১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত), সঙ্গে সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। অনেক সময় ব্যথা এত তীব্র হয় যে মনে হয় হাড় বুঝি ভেঙে যাচ্ছে। তাই এ জ্বরের আরেক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার’।
জ্বর হওয়ার চার বা পাঁচ দিনের মাথায় সারা শরীরে লালচে দানা (স্কিন র্যাশ) দেখা যায়। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব, বমিও হতে পারে। রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে এবং রুচি কমে যায়।
সাধারণত চার–পাঁচ দিন থাকার পর জ্বর এমনিতেই চলে যায়। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এর দু–তিন দিন পর আবার জ্বর আসে। তাই একে ‘বাই ফেজিক ফিভার’ বলে।
ডেঙ্গু রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই; লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল–জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
ব্যথা কমানোর জন্য কখনোই ব্যথানাশক ওষুধ যেমন ডাইক্লোফেনাক, ন্যাপ্রোক্সেন, আইবু প্রোফেন, কিটোরোলাক খাওয়া যাবে না।
বিশ্রাম নিতে হবে এবং পর্যাপ্ত তরল খাবার (খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, গ্লুকোজের শরবত) খেতে হবে।
বিপজ্জনক লক্ষণ দেখা দিলে (পেটব্যথা ও বমি করা, গায়ে লাল-কালো দাগ, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, প্রসাব–পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, প্রস্রাব স্বাভাবিক কমে যাওয়া, কিছুই খেতে না পারা) হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
প্লাটিলেট কমে যাওয়া নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। প্লাটিলেট কমে যাওয়াই স্বাভাবিক। এটি নিজেই আবার বাড়তে শুরু করে। যদি রক্তক্ষরণ হয় কিংবা প্লাটিলেট কাউন্ট ১০,০০০–এর নিচে নেমে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো প্লাটিলেট দিতে হতে পারে।
ডা. মো. আরিফ উর রহমান, রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিট, হেমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল