বলিউডের ‘তারে জামিন পার’ সিনেমা দেখে থাকলে ঈশানের কথা হয়তো মনে আছে। সেখানে ঈশান ‘ডিসলেক্সিয়া’ নামের স্নায়ুর বিকাশজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ছিল। অনেকেই একে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা ভেবে ভুল করেন। আদতে ডিসলেক্সিয়া একধরনের ‘লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটি’ বা শেখার অসুবিধা, যেখানে বুদ্ধিমত্তা সাধারণত বয়স অনুপাতে স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক থাকার পরও এই শিশুদের প্রাথমিকভাবে শুদ্ধ এবং সাবলীলভাবে পড়তে ও বানান করতে অসুবিধা হয়। কারণ, ডিসলেক্সিক শিশুদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে তথ্য সমন্বয়ে সমস্যা থাকে। লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটির মধ্যে ডিসলেক্সিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা যায় শিশুদের মধ্যে।
আমাদের মস্তিষ্কের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের পেছন দিকের অংশ সাধারণত বানান করা এবং পড়া নিয়ন্ত্রণ করে। ডিসলেক্সিকদের এই অংশ স্বাভাবিকের চেয়ে কম কার্যকর থাকে, অন্যদিকে মস্তিষ্কের সামনের দিকের অংশ বেশি কাজ করে।
ডিসলেক্সিয়া অনেক সময় বংশগত হতে পারে। কিন্তু কোনো জিন এককভাবে ডিসলেক্সিয়ার জন্য দায়ী নয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ২৩-৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ডিসলেক্সিক শিশুদের মা–বাবা অথবা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের ডিসলেক্সিয়া থাকতে পারে।
শিশু কথা শিখতে দেরি করছে
বর্ণমালার অক্ষরগুলো চিনতে অসুবিধা হচ্ছে
অক্ষরের সঙ্গে শব্দ মেলাতে কষ্ট হয়, শব্দের সঙ্গে কথা মেলাতে অসুবিধা হয়
সাধারণ বয়স উপযোগী ছড়া শিখতে অসুবিধা হচ্ছে
এসব ছড়ার অর্থ উপলব্ধি করতেও সমস্যা হচ্ছে
নতুন শব্দ শিখতে সমস্যা হচ্ছে
জটিল শব্দ বানান করতে ভুল হওয়া
কোনো প্রশ্নের মৌখিক জবাব দিতে বেশি সময় লাগা
বলার জন্য শব্দভান্ডার বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকা
মুখে জোরে শব্দ করে বলায় অস্বস্তিভাব
শব্দের অর্থ উদ্ধার করতে এবং শব্দ উচ্চারণ করতে কষ্ট হওয়া
যথাযথভাবে বয়স এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী অনর্গল কথা বলতে অসুবিধা
জোরে শব্দ করে পড়তে ভয় পাওয়া বা পড়তে কষ্ট হওয়া
নতুন এবং অজানা শব্দ পড়তে অসুবিধা হওয়া
শব্দ চিনতে কষ্ট হওয়া
শব্দ করে পড়ায় খুব ধীরগতি এবং শ্রমসাধ্য বলে মনে হওয়া
অন্য ভাষার শব্দ শিখতে কষ্ট হওয়া
লিখতে গেলে সহজ বানানও ভুল হওয়া
বই না পড়ে নতুন কিছু শিখতে অন্য কোনো মাধ্যম, যেমন ভিডিও দেখে, ছবির মাধ্যমে অর্জন করা
পরীক্ষায় সম্পূর্ণ লিখে শেষ করতে না পারা
পরীক্ষায় বুদ্ধি অনুযায়ী যা পারা উচিত, তা না পারা
স্কুলে ফল আশানুরূপ না হওয়ায় ডিসলেক্সিক শিশুরা বেশ মানসিক চাপে থাকে, যার ফলে পরবর্তী সময় হতাশা, অস্থিরতাসহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়।
বিভিন্ন ধরনের মূল্যায়নের মাধ্যমে ডিসলেক্সিয়া নির্ণয় করা গেলেও সুনির্দিষ্ট কোনো একটি পরীক্ষা দিয়ে তা নির্ণয় করা কঠিন। ডিসলেক্সিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমেই পরিবারের সহযোগিতা প্রয়োজন, এরপরই আসে স্কুলের ভূমিকা।
ডিসলেক্সিক শিশুকে বিকল্প উপায়ে তার দুর্বলতার জায়গা চিহ্নিত করে শেখানোতে অভ্যস্ত করতে হবে। শিশুকে ক্লাসের পড়া অডিও রেকর্ড করে শুনিয়ে, প্লাস্টিক বা কাঠের ত্রিমাত্রিক অক্ষর স্পর্শ করিয়ে অক্ষর চেনানো, সেসব মিলিয়ে শব্দ তৈরি করা শেখানো যেতে পারে। ছবি দেখিয়ে নতুন শব্দ বা পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত করা অথবা নির্দেশনা দিয়ে কাজ শেখানো যেতে পারে। পরিকল্পনামাফিক ছোট ছোট বিষয় তৈরি করে পড়তে উৎসাহ দেওয়া উচিত। বকাঝকা বা অপমান করে নয়; বরং সাহস দিয়ে আনন্দের সঙ্গে বারবার অনুশীলন করে শব্দ শেখার দুর্বলতাও কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। ডিসলেক্সিয়ার উপসর্গ দেখলে অবশ্যই শিশুবিশেষজ্ঞ অথবা শিশু নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে।