সময়ের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নানা কিছুর কল্যাণে ক্রমশ কমে যাচ্ছে অ্যাটেনশন স্পান বা মনোযোগের স্থায়িত্ব। এখন ফেসবুকেও বড় পোস্ট দেওয়ার চল কমে এসেছে। জনপ্রিয় হচ্ছে ইনস্টাগ্রাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমনটা বলেছিলেন, ‘সময়ের সমুদ্রে আছি, কিন্তু এক মুহূর্ত সময় নেই।’ এখন এই সময়ে দাঁড়িয়ে এই বাক্য যেন আরও বেশি করে সত্যি হয়ে উঠেছে। তরুণেরা ভুগছে মানসিক অস্থিরতায়।
মন স্থির বা মনোযোগ ঠিক রেখে স্ট্রেস, উদ্বেগ কমানো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ পরিচিত একটি উপায় হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মন স্থির রাখলে যেকোনো কাজে ফোকাস ধরে রাখা সহজ। বিশেষ করে তরুণদের মন স্থির বা মনোযোগ বাড়ানোর জন্য দরকার মাইন্ডফুল কাজ। প্রতিদিনের রুটিনে এই কাজগুলো অন্তর্ভুক্ত করা খুবই সহজ।
এমনকি আপনি যেকোনো বয়সেই চর্চা করতে পারেন এই উপায়গুলো। মন স্থির বা মনোযোগ বাড়ায়, এমন পরিচিত একটি কাজ হলো মেডিটেশন। এমন অনেক মেডিটেশন আছে; যা আমরা সাধারণ কাজ মনে করি। কিন্তু সেগুলো আমাদের মন স্থির করে স্ট্রেস, উদ্বেগ কমায়। তরুণদের জন্য রয়েছে তেমন কিছু মেডিটেশন ও কিছু উপায়।
এরই একটি হলো হাঁটা। হাঁটা শুধু ব্যায়াম নয়। ওজন কমাতে বা ফিট থাকতে এটি যেমন একটি উপকারি ব্যায়াম, তেমনি মনোযোগ বাড়াতেও এটি দরকারি মেডিটেশন। হাঁটার মেডিটেশনের ধরনও স্বাভাবিক। একটা মসৃণ জায়গায় লম্বাভাবে বা গোল হয়ে হাঁটতে পারেন। এই মেডিটেশনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় মানার প্রয়োজন নেই। আপনি যখন কাজে যাচ্ছেন বা কাজ থেকে ফিরছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঘুরছেন বা বাচ্চাদের সঙ্গে পার্কে আছেন, করে ফেলতে পারেন হাঁটার মেডিটেশন।
মোবাইল সাইলেন্ট করে, গান, রেডিও বন্ধ করে গাড়ি চালান—
গাড়ি চালানোর সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ে থাকতে হয় মনোযোগ। গাড়ির ওজন, গতি, শব্দ, দূরত্ব—এই বিষয়গুলো মিলিয়ে মন স্থির করে গাড়ি চালানো মাইন্ডফুল মেডিটেশন। মেডিটেশনের জন্য গাড়ি চালানোর সময়ে মোবাইল ফোন রাখতে সাইলেন্ট মুডে রাখতে হবে। গাড়ির মিউজিক বন্ধ রাখতে হবে। বেশি শব্দ বা কথার মধ্যে মন শান্ত থাকে না।
কাজের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত দুই ধরনের শব্দ বেশি শুনে থাকি। একটি মাল্টি টাস্কিং, অন্যটি সিঙ্গেল টাস্কিং। অর্থাৎ একসঙ্গে কয়েকটি কাজ করা অথবা একটি কাজে মনোনিবেশ। একসঙ্গে বহু কাজের কিছু সুবিধা থাকলেও এতে চাপ ও উদ্বেগ বাড়ে। অপর দিকে সিঙ্গেল টাস্কিং হলো একধরনের মেডিটেশন। এ ধরনের মেডিটেশনে বেশ কিছু বিষয় চর্চা করতে হবে। কীভাবে আপনি শ্বাস নিচ্ছেন, আপনি যে স্থানে বসে বা দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানে আপনার শরীর কেমন অনুভব করছে, বাতাসের সেনসেশন বা সংবেদনশীলতা, আপনার শরীরের গঠন ও ভঙ্গি এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকেই হয়তো জানি না মন স্থির করে খাওয়াও কিন্তু মেডিটেশন। খাওয়ার মেডিটেশনের কিছু সাধারণ চর্চা রয়েছে। খাওয়ার সময়ের প্লেট, চামচের শব্দও খেয়াল করা, প্রতিবারেই খাবার চিবিয়ে খাওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া কিছু বিশেষ চর্চা থাকা জরুরি। খাওয়ার প্রথম কয়েক মিনিট থাকতে হবে একেবারেই নীরব। খাবারের প্রতিটি বাইটে খাবারের স্বাদ, গন্ধ ও ঘনত্বে মনোযোগ দিতে হবে। খাওয়ার সময়ে টিভি দেখা বা ফোন ব্যবহার করা যাবে না।
বাগান করা মনোযোগ বাড়ানো, চাপ কমানো ও উদ্বেগ কমাতে সবচেয়ে বেশি উপকারী। যদিও ব্যস্ততায় অনেকেই আলাদা করে বাগান করার সময় পান না। তাই ঘরেই ছোট বাগান করে এই মেডিটেশনটি করা সম্ভব। বাগানে পানি দেওয়া, গাছের ফুল বা ফল দেখা, মাটির আর্দ্রতা খেয়াল করা—এসব দারুণভাবে মনোযোগ বাড়ায়। এ ছাড়া বাগানে পাখির ডাক শোনা বা বাতাসে গাছের পাতা ও ফুল খেয়াল করা—এগুলোও উপকারী মেডিটেশন; যা তরুণদের মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন