ব্যায়ামের মাধ্যমে পেশির শক্তি বাড়িয়ে বা বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে ভালো থাকা যায়। এ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ, মলম বা প্রয়োজনে ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়।
সুস্থভাবে চলাফেরা ও কাজকর্মের জন্য কেবল অস্থির সুস্থতা নয়, দরকার সন্ধি–সংশ্লিষ্ট পেশি, নার্ভ বা স্নায়ু এবং রগ বা টেনডনের সুস্থতা। বয়সের কারণে, আঘাত পেলে বা সংক্রমণের কারণে অনেক সময় এ সন্ধির আশপাশের কোষকলাগুলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দেখা দেয় ব্যথা–বেদনা, জড়তা ও নানা সমস্যা।
কাঁধব্যথা, কাঁধ শক্ত হয়ে জমাট হয়ে থাকার অনুভূতি বা জড়তার কারণে নাড়াতে না পারা—এ সমস্যাকে বলে ফ্রোজেন শোল্ডার। কাঁধের চারপাশের কলা বা ক্যাপসুলে প্রদাহ হলে এমন হয়। যাঁদের আগে থেকে কাঁধে কোনো আঘাত বা অপারেশনের ইতিহাস আছে, তাঁদের ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, স্ট্রোকের রোগীরও ঝুঁকি বেশি। ফ্রোজেন শোল্ডার সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারী–পুরুষের বেশি হতে দেখা যায়। ব্যথানাশক ওষুধ, ব্যথার তীব্রতা বুঝে অনেক সময় কাঁধের জয়েন্টে ইনজেকশন আর ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয় এ সমস্যার। ধীরে ধীরে সেরে ওঠে, তবে কারও কারও ক্ষেত্রে পুরোপুরি সারতে এক বছর বা কয়েক বছরও লাগতে পারে।
কনুইয়ের সন্ধির ব্যথাকে বলে টেনিস এলবো। কোনো কারণে বাহুতে বা হাতে বা এলবো জয়েন্ট বা কনুইতে ব্যথা পেলে সঙ্গে সঙ্গে বরফের টুকরা ব্যবহার করে সেঁক দিলে ও বিশ্রাম নিলে ব্যথা কমে আসে। কিন্তু যদি সামান্য নড়াচড়াতেই ব্যথা বাড়ে, সন্ধি ফুলে যায়, লাল হয়ে যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ভালো। কারণ, ফ্রাকচার বা ভেঙে যাওয়া অসম্ভব নয়। এ ছাড়া স্প্রেইন বা পেশিতে টান পড়া, বার্সাইটিস, নার্ভে চাপ পড়ার কারণেও হাতের সন্ধিতে ব্যথা হতে পারে।
হাতের কবজির মধ্যে অবস্থিত স্নায়ুতে চাপ পড়লে হাত ঝিন ঝিন করে, অবশ হয়ে আসে বা ব্যথা শুরু হয়। দিনের চেয়ে অনেক সময় রাতে বেশি বাড়ে এ সমস্যা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো অপারেশন ছাড়াই রিস্ট স্প্লিন্ট, ইনজেকশন ও ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ব্যথা ও ঝিঁ ঝিঁ ভাব সেরে যায়। তবে যদি এসব চিকিৎসায় না সারে বা নার্ভ এর স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে অপারেশন লাগতে পারে।
হাঁটুব্যথার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো অস্টিও আর্থ্রাইটিস। বয়স্কদের এ সমস্যা অনেক ভোগায়। হাঁটুর সন্ধিতে যে তরুণাস্থি বা কার্টিলেজ আছে, তার ক্ষয়ের কারণে বা যাঁদের রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা গাউট আছে, তাঁরা এর শিকার হন বেশি। ওজন কমাতে হবে, জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তন আনতে হবে। হাঁটু গেড়ে কাজ করা যাবে না বা বসা যাবে না। ব্যায়ামের মাধ্যমে পেশির শক্তি বাড়িয়ে বা বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করে ভালো থাকা যায়। এ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ, মলম বা প্রয়োজনে ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়।
ঊরু ও পায়ের পেশিতে প্রায়ই টান পড়ে, যাকে লেগ ক্রাম্প বলে। ডায়াবেটিসের রোগীর, গর্ভাবস্থায়, ব্যায়াম করার সময়, যকৃতের সমস্যায় ও চর্বির ওষুধ সেবন করলে ঝুঁকি বাড়ে। লবণের ঘাটতি, ভিটামিন ডি আর ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও অনেক সময় এর জন্য দায়ী। কিছু ওষুধ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে এ ব্যথা থেকে নিরাময় পাওয়া সম্ভব।
ডা. জোবায়ের আহমেদ, মেডিসিন ও বাতরোগ বিশেষজ্ঞ, স্কয়ার হাসপতাল