কখনো কাউকে রক্ত দেখে মাথা ঘুরে পড়ে অজ্ঞান হতে দেখেছেন? বা কেউ লম্বা সময় লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলল? এ রকমটা আমাদের অনেকের হয়। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলে ভ্যাসোভেগাল সিনকোপ বা ভ্যাসোভেগাল শক। কোনো উত্তেজক বা বিভীষিকাময় বিরূপ পরিস্থিতিতে আমাদের অটোনোমিক নার্ভাস সিস্টেম তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানোর কারণে হঠাৎই হৃৎস্পন্দন ধীর হয়ে যায়, রক্তনালিগুলো প্রসারিত হয়ে যায়, রক্তচাপ কমে যায়। এরপরই মস্তিষ্কে ও হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ কমে গিয়ে কেউ হঠাৎ মুহূর্তের জন্য অচেতন হয়ে পড়ে। দু–এক মুহূর্ত পরই আবার তার জ্ঞান ফিরে আসে এবং সে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বোধ করে। এটাই হলো ভ্যাসোভেগাল সিনকোপ।
সাধারণত ভ্যাসোভেগাল সিনকোপ হওয়ার জন্য কিছু পরিস্থিতি বা ট্রিগার কাজ করে, যেমন খুব গরমে দীর্ঘ সময় থাকা, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা (যেমন কিউ বা লাইনে), রক্ত বা দুর্ঘটনা দেখে হঠাৎ ভয় পাওয়া, হাসপাতালে নিজের রক্ত দেওয়ার সময় ইত্যাদি। এটা নিয়ে চিন্তিত বা আতঙ্কিত হওয়ার আসলে কিছু নেই। এটা কোনো অপ্রীতিকর বা বিরূপ পরিস্থিতিতে আমাদের স্নায়ু ব্যবস্থার একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ারই রূপ।
ভ্যাসোভেগার সিনকোপের সময় রোগীর হঠাৎ মাথা হালকা হয়ে যায়, হাত–পা ঠান্ডা হয়ে আসে, ঘাম দেখা দেয়, মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আসে, কখনো পেট গুলিয়ে আসে বা বমি পায়। তারপরই কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের জন্য রোগী অচেতন হয়ে পড়ে। অচেতন হওয়ার পর রক্তপ্রবাহ খুব দ্রুতই আবার পায়ের দিক থেকে মস্তিস্কে ও হৃৎপিণ্ডে প্রবাহিত হয় ও তার জ্ঞান ফিরে আসে।
ভ্যাসোভেগাল সিনকোপের কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না। রোগী এমনিতেই ভাল বোধ করে। তবে হঠাৎ জ্ঞান হারানো বা পড়ে যাওয়ার অন্য কোনো কারণ আছে কি না খতিয়ে দেখা উচিত। যেমন হৃদ্রোগ, এপিলেপসি, হাইপোগ্লাইসেমিয়া, পানি ও লবণের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি। প্রয়োজনে একটা ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, রক্তের শর্করা, ইলেকট্রোলাইট বা হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা ইত্যাদি করিয়ে নেওয়া ভালো। যেমন যাঁদের এই প্রবণতা আছে, তাঁদের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়। খুব গরমে অনেকক্ষণ বাইরে থাকবেন না। প্রচুর পানি পান করবেন। খারাপ লাগতে থাকলে বসে বা শুয়ে পড়বেন, যাতে রক্তপ্রবাহ শরীরের নিম্নভাগ থেকে ওপরের দিকে প্রবাহিত হয়। চেয়ারে বসে দুই হাঁটুর মধ্যে মাথা গুঁজে দিলেও ভালো লাগবে। অথবা শুয়ে পা দুটো একটু উঁচু করে (বালিশের ওপরও দেওয়া যায়) দিন। পায়ে কমপ্রেশন স্টকিং বা মোজা পরতে বলা হয় অনেক সময়। কিছু ফুট এক্সারসাইজ শিখে নিতে পারেন, যাতে রক্তনালিগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডা. মৌসুমি মরিয়ম সুলতানা, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুর