খাবার যদি সঠিকভাবে হজম না হয়, তাহলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা। হজমপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে ডায়রিয়া, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্থূলতা, অপুষ্টিসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুস্থ থাকতে তাই সঠিকভাবে খাবার হজম হওয়া খুব জরুরি।
সাধারণত হজমশক্তি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। যাঁদের খাবার ঠিকমতো হজম হয় না, তাঁরা সঠিক খাদ্যাভাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে হজমশক্তি সবল করা সম্ভব। হজমশক্তি বাড়ানোর সহজ উপায়গুলো হলো:
● খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হবে। যিনি যত ভালোভাবে চিবিয়ে খাবার খান, তাঁর পাচকরস নিঃসরণ তত ভালো হয়। এসব পাচকরস খাবারকে সঠিকভাবে হজম করতে সহযোগিতা করে।
● খাবারের সঙ্গে লেবু রাখতে পারেন। লেবু খুব সহজে খাবার হজম করতে সাহায্য করে। চাইলে খাওয়ার পর লেবুপানি খেতে পারেন।
● প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খান। ক্যালসিয়াম আমাদের হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। অনেকেই ল্যাকটোজেন অসহিষ্ণুতার কারণে দুধ খাওয়া একেবারে ছেড়ে দেন। এ ক্ষেত্রে দুধ খাওয়া একেবারে না ছেড়ে অল্প করে খাওয়ার অভ্যাস রাখা উচিত। অথবা ল্যাকটোজ ফ্রি দুধ খেতে পারেন।
● দুধের বিকল্প হিসেবে দই খেতে পারেন। হজমশক্তি বাড়াতে দই খুব সহায়ক। এতে অন্ত্রের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। ক্যালসিয়াম ও প্রোটনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এটি হজমে সাহায্য করে।
● গ্রিন টি বা পুদিনাপাতার চা পান করতে পারেন দিনে দুইবার। এতে বিদ্যামান অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট খাবার হজমে সাহায্য করে।
● খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবার বেশি রাখুন। আঁশযুক্ত খাবার সহজে পানি শোষণ করে, হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। নিয়মিত শাকসবজি, ফল, সালাদ, চিয়া সিড, ইসবগুল খেতে পারেন। পানির পরিমাণ বেশি রয়েছে, এমন ফল ও সবজি, যেমন তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, টমেটো, লাউ ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় বেশি রাখুন।
● পানি ছাড়া কোনো খাবারই সঠিকভাবে হজম হয় না। দৈনিক ১০-১২ গ্লাস পানি পান করুন। তবে খাওয়ার আগে এবং খাওয়ার মধ্যে অতিরিক্ত পানি পান করা যাবে না। এতে বদহজম হয়।
● রাতের খাবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটার মধ্যে খেয়ে ফেলা ভালো। গভীর রাতে খাবার খাওয়া যাবে না। খেয়েই ঘুমানো যাবে না। ঘুমনোর ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার গ্রহণ করুন।
● নিয়মিত ব্যায়াম করলে খাবার সঠিকভাবে হজম হয়। সারা দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম, যেমন হাঁটাহাঁটি, জগিং ও সাইক্লিং করার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে পেটে চাপ পড়ে, এমন ব্যায়াম করলে হজম ত্বরান্বিত হয়। পাশাপাশি শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়ামও জরুরি। এতে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয়।
● সারা দিনে ৭–৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম প্রয়োজন। রাতজাগা চলবে না। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে হজমপ্রক্রিয়ার উন্নতি হয়।
● মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে।
● অতিরিক্ত তেল, ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজাপোড়া এড়াতে হবে।
● ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।