ভালো থাকুন

সন্তান ভূমিষ্ঠের পর হার্ট ফেইলিউর

গর্ভস্থ শিশুর অক্সিজেন ও পুষ্টি জোগাতে মায়ের হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যকলাপে কিছু পরিবর্তন হয়। এ সময় মায়ের রক্তের পরিমাণ বেশ খানিকটা বেড়ে যায় এবং হৃদ্‌যন্ত্রকে প্রতি মিনিটে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি রক্ত পাম্প করতে হয়। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ধীরে ধীরে পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিক হতে শুরু করে এবং ছয় সপ্তাহের মধ্যে মায়ের সব শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া আগের অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু সুস্থ হৃদ্‌যন্ত্র নিয়ে গর্ভধারণ করার পরও সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যে ও গর্ভকালীন শেষ তিন মাসে মায়ের হার্ট ফেইলিউর হতে পারে; এর নাম পোস্ট–পার্টাম হার্ট ফেইলিউর।

কেন হয়

  • গর্ভকালীন বাড়তি চাপ যদি হৃদ্‌যন্ত্র সামলাতে না পারে, তখন মায়ের হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।

  • গর্ভকালীন অপুষ্টি, বেশি সন্তানের জন্মদান, গর্ভস্থ যমজ সন্তান, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও মদ্যপান।

  • হৃদ্‌যন্ত্রের মাংসপেশিতে ভাইরাসের সংক্রমণ, বংশগতির প্রভাব ও প্রোলাক্টিন হরমোনের অত্যধিক প্রভাবেও এমনটা হতে পারে।

  • গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপের ফলে মায়ের শরীর থেকে প্রস্রাবের সঙ্গে অ্যালবুমিন নামের প্রোটিন বের হয়ে যায়। তখন দুই পা, এমনকি সারা শরীরে পানি জমে হার্ট ফেইলিউর হতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন

  • শ্বাসকষ্ট, অল্পতেই হয়রান হওয়া, চিৎ বা কাত হয়ে ঘুমাতে গেলে শ্বাসকষ্ট।

  • পায়ে বা শরীরে পানি আসা, বুক ধড়ফড়, রক্তচাপ খুব বেশি কমে যাওয়া (সিস্টোলিক ৯০ মিমির কম) ও অতিরিক্ত দুর্বলতাও হতে পারে।

  • গর্ভকালীন বা পোস্ট–পার্টাম হার্ট ফেইলিউর বেশির ভাগই শুরুর দিকে ধরা পড়ে না। এর অন্যতম কারণ, অনেকেই গর্ভকালীন শেষ তিন মাসে একটু শ্বাসকষ্ট হওয়াকে, একটু–আধটু শরীর বা পা ফোলাকে স্বাভাবিক ধরে নেন। এতে অসুখ গুরুতর অবস্থায় পৌঁছায়।

জটিলতা

  • সময়মতো চিকিৎসা করলে ৫০ শতাংশেরও বেশি নারী পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।

  • ছয় মাস পরও যাঁদের হার্ট ফেইলিউর থাকে, তাঁদের সারা জীবন চিকিৎসা নিতে হয়।

  • অনেক সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা তৈরি হয়। গর্ভকালীন বা পোস্ট–পার্টাম হার্ট ফেইলিউরে হার্টের ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। তা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

করণীয়

  • অন্তঃসত্ত্বা নারীকে নিয়মিত চেকআপে থাকতে হবে।

  • গর্ভকালীন শেষ তিন মাস ও সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পাঁচ মাস সময় পর্যন্ত ছোটখাটো উপসর্গকেও অবহেলা করা যাবে না।

  • রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ইসিজি ও ইকোকার্ডিওগ্রাম করতে হবে।

  • নিয়মিত সুষম খাবার খেতে হবে এবং ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

  • নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে হবে।

  • একবার এই অসুখ হলে পরে আবার হওয়ার ঝুঁকি আছে। সে ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পরবর্তী সময়ে গর্ভধারণ করা যাবে না।

ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, সহকারী অধ্যাপক, হৃদ্‌রোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা