সংক্রমিতদের ৩৩% সাধারণ মানুষ

দেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার এখনো নিম্ন পর্যায়ে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ নয় এমন মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ছে।

১৯৮১ সালে এইডস প্রথমবারের মতো শনাক্ত করা সম্ভব হয়। রোগ শনাক্তের পর থেকে এ পর্যন্ত এইডসে বিশ্বব্যাপী সাড়ে তিন কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে

দেশে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর মধ্যে সাধারণ মানুষ, শিরায় মাদক গ্রহণকারী ও প্রবাসী শ্রমিকের হার বেশি। ২০২০ সালের তথ্য বলছে, সংক্রমিত রোগীর ৩৩ শতাংশ ছিল সাধারণ মানুষ।

জাতিসংঘের এইচআইভি/এইডস–বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইডস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও রোগীর চিকিৎসায় তিন ধরনের লক্ষ৵মাত্রা ঠিক করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর ৯০ শতাংশকে শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। চিকিৎসার আওতায় থাকা রোগীদের ভাইরাসের বোঝা সহনীয় মাত্রায় রাখতে হবে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, লক্ষ্যমাত্রা থেকে দেশ পিছিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তা বলছেন, সময় শেষ হয়ে যায়নি।

এ পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বিশ্ব এইডস দিবস পালিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমতার বাংলাদেশ, এইডস ও অতিমারি হবে শেষ’। দিবসটি উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাজধানীর মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় দেশের সর্বশেষ এইডস পরিস্থিতি জানানো হয়।

লক্ষ্য থেকে দূরে

ইউএনএইডসের অনুমিত হিসাবে দেশে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ১৪ হাজার। গত বছর ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৩২ জন। সংক্রমিত ব্যক্তির তুলনায় শনাক্তের হার ৫৭ শতাংশ। ইউএনএইডসের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

জাতীয় এইচআইভি–এইডস কর্মসূচি শনাক্ত হওয়া সব মানুষকে চিকিৎসার আওতায় আনতে পারেনি। সংক্রমিত ৬ হাজার ১০৪ জনকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ৵মাত্রার কাছাকাছি যাচ্ছে দেশ। তারপরও ১ হাজার ১২৫ জন সংক্রমিত ব্যক্তি চিকিৎসার বাইরে রয়ে গেছে। তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি।

দেশের পরিস্থিতি

বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিলেন ১৯৮৯ সালে। দেশে ২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছিলেন ৮ হাজার ৩২ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৩৮৩ জন।

২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৯ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিলেন নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী পুরুষ, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি, সাধারণ মানুষ, প্রবাসী শ্রমিক, হাসপাতালে প্রসব সেবা নিতে আসা মা ও মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা। এ ছাড়া নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচির মাধ্যমে দেওয়া রক্তও পরীক্ষা করা হয়েছিল।

তাতে ৬৫৮ জনের শরীরে এইচআইভি শনাক্ত হয়েছিল। সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল সাধারণ মানুষ। তাদের হার ছিল ৩৩ শতাংশ। শিরায় মাদক নেওয়া ব্যক্তি ছিল ২০ শতাংশ, রোহিঙ্গা ১৯ শতাংশ ও প্রবাসী শ্রমিক ১৫ শতাংশ।

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বেশি ধরা পড়ছে এর অর্থ মানুষ সচেতন নয় বা সরকার মানুষকে সচেতন করতে পারছে না।