শ্বাসকষ্ট মানেই বুকের বা ফুসফুসের রোগ না–ও হতে পারে। এমন নয় যে বুকে স্টেথিসকোপ লাগিয়ে বা বুকের একটা এক্স–রে করেই সব শ্বাসকষ্টের সমাধান পাওয়া যাবে। প্রায়ই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে এমন শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোগী আসেন, যাঁদের রোগের কারণ খুঁজতে ডাক্তার গলদঘর্ম হয়ে যান। প্রথাগত প্রাথমিক পরীক্ষা–নিরীক্ষায় রোগের কারণের টিকিটির নাগাল পাওয়া যায় না।
শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কষ্ট হলে প্রথমেই সবার মনে পড়ে হার্টের রোগ আর হাঁপানি রোগের কথা। কারণ, এই রোগগুলো বেশ পরিচিত সমস্যা চারদিকে। এই রোগগুলোকে আমরা অনেক বেশি ভয়ও পাই। যখন হৃদ্যন্ত্রের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়, তখন ফুসফুসে রক্ত জমে গিয়ে ফুসফুসকে অনমনীয় করে তোলে। তখন শ্বাস নেওয়ার জন্য বেশি শক্তি লাগে। আর হাঁপানি হলে ফুসফুসে হাওয়া ঢোকা–বেরোনোর পাইপ (ব্রঙ্কিওল) সরু হয়ে যায় বলে শ্বাসকষ্ট হয়।
ফুসফুসের কোনো সমস্যা না থাকলেও হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে ব্লক হওয়ার কারণে হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচল কমে যায়। তখন বুকে অস্বস্তি ও শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। এ ছাড়া জ্বর বা রক্তশূন্যতা হলে নিশ্বাসের হার বেড়ে যায়। কোনো কারণে রক্তে অম্লের পরিমাণ বেড়ে গেলে (মেটাবলিক অ্যাসিডোসিস) শ্বাসকষ্ট হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত ডায়াবেটিস, কিডনির অকার্যকারিতা, ল্যাকটেট জমে যাওয়া বা নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতির কারণে এমনটা হতে পারে। অত্যধিক ওজন বেড়ে যাওয়াও শ্বাসকষ্টের একটা অন্যতম কারণ। স্থূলতার কারণে অনেকের রাতে স্লিপ অ্যাপনিয়া হয় এবং যন্ত্র লাগিয়ে শ্বাস নিতে হয়।
হাইপার ভেন্টিলেশন সিনড্রোমের কারণটা যদিও খুব স্পষ্ট নয়, তবে এর সঙ্গে উৎকণ্ঠা আর ভীতির (প্যানিক ডিজঅর্ডার) সম্পর্ক আছে। এটা মনের রোগ। এতে শারীরিক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি করে শ্বাস নেওয়ার জন্য রক্তের কার্বন ডাই-অক্সাইড শ্বাসের সঙ্গে অত্যধিক মাত্রায় বেরিয়ে যায় ও রক্তে ক্ষারের মাত্রা বেড়ে যায়। দেখা গেছে, উৎকণ্ঠা আর ভয় পেলে প্রায় ২৫ থেকে ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রে একধরনের শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়, যার কোনো শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।