আমরা সবাই চাই আমাদের সন্তান তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন ও মেধাবী হোক। এ জন্য শিশুর খাবারের প্রতি আমাদের অবশ্যই অত্যন্ত যত্নবান হতে হবে। সাধারণত পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর মস্তিষ্কের প্রায় সার্বিক গঠন ও বিকাশ সম্পন্ন হয়। তাই বিশেষ করে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর খাদ্যযত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে যেসব খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেগুলো নিয়ে আজ আলোচনা করব।
ডিম
ডিম প্রোটিনের খুব ভালো উৎস, এটা আমরা সবাই জানি। এ ছাড়া ডিমের কুসুমে কোলিন থাকে, যা শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দুধ
দুধ ও দুধজাতীয় খাবার থেকে প্রোটিন ও ভিটামিন বি পাওয়া যায়; যা মস্তিষ্কের গঠনের জন্য অপরিহার্য।
চিনাবাদাম ও চিনাবাদামের মাখন (পিনাট বাটার)
চিনাবাদাম ভিটামিন ই-এর উৎস হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া এতে এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্রের আবরণকে সুরক্ষা দান করে। এ ছাড়া চিনাবাদাম থেকে থায়ামিন পাওয়া যায়, যা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে গ্লুকোজ ব্যবহার করে শক্তি তৈরিতে সাহায্য করে।
বিনজাতীয় খাদ্য
শিম, মটরশুঁটি, বাদাম প্রভৃতিতে অধিক পরিমাণে প্রোটিন, জটিল শর্করা, খাদ্যআঁশসহ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। এসব উপাদান শিশুর জন্য খুবই উপকারী। এই খাবারগুলো শিশুর চিন্তাশক্তি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ওটস
শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে ওটস চমৎকার কাজ করে। এটি মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। ওটসে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে এবং সেই সঙ্গে এটি ভিটামিন ই, ভিটামিন বি, জিঙ্ক ও পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই শিশুর সকালের নাশতায় ওটস রাখা হলে বেশ ভালো উপকার পাওয়া যায়।
বেরিজাতীয় ফল
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, চেরি জাতীয় ফলে উচ্চমাত্রার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
রঙিন শাকসবজি
গাজর, টমেটো, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু, পালংশাকের মতো রঙিন শাকসবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সবচেয়ে ভালো উৎস, যা মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সুগঠিত করে এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ।
তেলযুক্ত মাছ
স্যামন-জাতীয় তেলযুক্ত মাছ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের খুব ভালো উৎস। আমাদের ইলিশের তেলেও রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি গ্রহণ করে, তারা তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে থাকে।
মাংস
শিশুর মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য আয়রন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়রন শিশুকে স্কুলে মনোযোগী হতে সহায়তা করে । এ ক্ষেত্রে গরুর মাংস আয়রনের খুব ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে ।
হোল গ্রেইন বা শস্য জাতীয় খাদ্য
মস্তিষ্কের জন্য অনবরত গ্লুকোজ সরবরাহ প্রয়োজন; যা শস্য থেকে পাওয়া যায়। এ ছাড়া হোল গ্রেইন থেকে ভিটামিন বি পাওয়া যায়; যা স্নায়ুতন্ত্রের পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে।
লেখক: পুষ্টিবিদ, লেকসিটি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, খিলক্ষেত, ঢাকা