শিশুর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠ সময় শৈশব। এই সময়ে তাদের প্রতিদিনের খাবারের থালায় যেন সুষম খাবারে সাজানো থাকে, সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখা উচিত। শিশুর প্রতিদিনের খাবারের থালায় সব খাদ্যশ্রেণিভুক্ত খাবারের জোগান দেওয়া বাঞ্ছনীয়। সঙ্গে সঙ্গে খাবারে স্বাদ ও বৈচিত্র্য আনতে একই খাদ্যশ্রেণি থেকে নানা রকমের খাবার নির্বাচন করা প্রয়োজন।
শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হলে ঘরে তৈরি আধা শক্ত, আধা তরল খাবারের জোগান দিতে হবে। এই পরিপূরক খাবারে সিরিয়াল, ডাল, দানাদার শস্য ও চিনি থাকা উচিত। এতে সে ভালো মানের প্রোটিন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি ও অন্যান্য অনুপুষ্টি লাভ করবে।
যখন শিশু নিজে থেকে খেতে পারার ক্ষমতা অর্জন করে, তখন মা-বাবার উচিত তাকে খাবার খেতে সাহায্য করা। অনেক সময় শিশু খাবার নিয়ে তা মুখের ভেতরের দিকে ঠেলে গিলতে পারে না, খাবার বের হয়ে আসে। এর মানে এই নয় যে শিশু সেই খাবার পছন্দ করছে না বা খাবার খাওয়ার বয়স হয়নি। সহযোগিতা পেলে সে ধীরে ধীরে এসব খাবার গলাধঃকরণের নৈপুণ্য অর্জন করে নেয়।
সব বয়সের শিশুর প্রতিদিনের খাবারে অসম্পৃক্ত চর্বি, দানাদার শস্য, সবজি ও ফলমূল থাকা প্রয়োজন।
আনন্দদায়ক পরিবেশ শিশুকে খাবার গ্রহণের সহায়ক। যেমন পরিবারের সবাই মিলে যদি একসঙ্গে খেতে বসে, তাহলে সবার সঙ্গে সে–ও হাসিখুশির সঙ্গে আহারে যোগ দেয়।
শিশু যখন সজাগ থাকে, তখন তাকে খাবার দেওয়া উচিত। তার খাবারের বাটি যেন আলাদা করে রাখা হয়।
শিশুকে খাবার দেওয়ার আগে তার জন্য তৈরি খাবার ও খাবার পরিবেশন নিরাপদ আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। শিশুর নিজের ও যত্নকারীর হাত ভালোমতো সাবানপানিতে ধুয়ে পরিষ্কার রাখা, পরিচ্ছন্ন বাসনকোসন ব্যবহার করার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
পানি নিরাপদ ও বিশুদ্ধ করতে ১০-১৫ মিনিট ভালোভাবে ফুটিয়ে তারপর ঠান্ডা করে নিতে হবে।
রান্না করা খাবার পারতপক্ষে দুই ঘণ্টার মধ্যে খাওয়ানো ভালো। তা না করা গেলে খাবার ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ওপর গরম করে অথবা রেফ্রিজারেটরে ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রেখে নিরাপদ রাখা যায়।
শিশু অসুস্থ হলে তাকে স্বাভাবিক সময়ের সুষম খাবার যেমন ডাল, দুধ, সবজি অল্প অল্প পরিমাণে বারবার খেতে দিতে হবে।
বারবার পানীয় ও তরল খাবার দেওয়া এবং যে বাচ্চা বুকের দুধ পান করে, তাকে ঘন ঘন মাতৃদুগ্ধ পান করাতে হবে।
অসুখের সময় শিশু কখনো যেন উপোস না থাকে বা খাবার নিয়ন্ত্রণ যেন না করা হয়।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল