যোগব্যায়াম আমাকে সেই প্রাণশক্তি দেয়: শিল্পা

শিল্পা শেঠি
শিল্পা শেঠি

বলিউড তারকা শিল্পা শেঠি ফিটনেস এবং সুস্থ থাকা (ওয়েলনেস) সম্পর্কিত নিজের একটি অ্যাপ প্রকাশ করেছেন গত ৬ মে। আন্তর্জাতিক যোগব্যায়াম দিবস উপলক্ষে শিল্পা শেঠি কুন্দ্রার বাড়িতে ১৭ জুন উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। শিল্পার সঙ্গে কথোপকথনে উঠে এসেছে যোগব্যায়াম ও অন্যান্য বিষয়ের নানা কথা।

ফিট থাকতে যোগব্যায়ামের পাশাপাশি শিল্পা শেঠি গ্রিন টিও পান করেন নিয়মিত। ছবি: সংগৃহীত

ফিটনেস ও ওয়েলনেস নিয়ে প্রকাশ করা নতুন অ্যাপটির প্রতিক্রিয়া কেমন?

শিল্পা শেঠি: দারুণ প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। আর এত ভালো সাড়া পেয়ে আমি অভিভূত। এখন অনেকে এটা নামিয়ে নিচ্ছে। বিদেশে বসে মানুষ ভারত থেকে যোগব্যায়াম (ইয়োগা) শিখছেন। ১১ বছর আগে আমি যোগের ওপর ডিভিডি প্রকাশ করেছিলাম। তখনো সবার প্রশংসা পেয়েছিলাম। এখন সময় বদলেছে। সবাই এখন চটজলদি উপায় খোঁজে। মোবাইল ফোনের মধ্যে সবকিছু পেতে চায়। অ্যাপটি বানাতে আমার দুই বছর সময় লেগেছে। আসলে আমি খুব খুঁতখুঁতে। তাই একটু সময় বেশি লাগল। আর অ্যাপটি আমি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বানিয়েছি।

যোগব্যায়াম আপনার জীবনধারাকে কতটা বদলেছে?

শিল্পা শেঠি: এটা আমার কাছে নিয়মানুবর্তিতা। আর আমি মনে করি, এটা ছাড়া মানুষ কোনো সফলতা পেতে পারে না। এমনকি নিয়মানুবর্তিতা ছাড়া মানুষের মধ্যে উদারতাও আসে না। যোগের মাধ্যমেই আমার জীবনকে আমি এক সুস্থ-স্বাভাবিক ছন্দে আনতে পেরেছি। এই ব্যায়াম মনকে শুদ্ধ করে। আসনের মাধ্যমে আমি আমার শরীর এবং মনের শুদ্ধীকরণ করি। এমনকি আমার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাধারার জন্ম হয়েছে। আমার মধ্যে অফুরন্ত প্রাণশক্তির সঞ্চার হয়েছে। এখন যোগব্যায়াম আমার জীবনযাত্রার সঙ্গে পুরোপুরি জড়িয়ে গেছে।

আপনি কার কাছে যোগব্যায়ামের প্রশিক্ষণ নেন?

শিল্পা শেঠি: রাজ পাণিগ্রাহির কাছে। তিনি আমার থেকে ১০ বছরের ছোট হবেন। কিন্তু তাঁর কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা আমার চেয়ে পরিণত। উনি আট বছর বয়স থেকে যোগব্যায়াম করছেন।

নানা রকম চাপের এই যুগে যোগব্যায়াম মানুষকে চাপমুক্ত (স্ট্রেস) রাখতে কতটা সাহায্য করে?

শিল্পা শেঠি: প্রত্যেকের জীবনে স্ট্রেস আছে। আমার জীবনও স্ট্রেসে ভরপুর। শুধু ভক্তরা নয়, আমার কাছে আমার পরিবারের প্রচুর আবদার ও চাহিদা থাকে। সেসব পূরণ করতে করতে স্ট্রেস আমাকে ঘিরে ধরে। মাঝেমধ্যে আমি অবাক হই যে কীভাবে আমি সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলি। যোগব্যায়াম আমাকে সেই প্রাণশক্তি দেয়। আর একটা কঠিন দিনকে সহজে অতিক্রম করার মনোবল জোগায়।

যোগের পাশাপাশি সঠিক ডায়েট কতটা জরুরি?

শিল্পা শেঠি: আমার এই অ্যাপ এবং আপনাদের মাধ্যমে আমি বলতে চাই যে পুষ্টি (নিউট্রিশন) সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়া খুব জরুরি। আমাদের সুস্থ থাকা ৭০ শতাংশ নির্ভর করে ডায়েটের ওপর। আর ডায়েট মানে এই নয় যে আপনি তেল খাওয়া ছেড়ে দেবেন, তেল–বর্জিত খাবার খাবেন। এখন এটা মানুষের নতুন ঢং। অনেকে জলপাই তেলে রান্না করেন। যার কোনো মানে হয় না। আমার রোজ ১ টেবিল চামচ ঘি চাই। তা না হলে আমার খাবার অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়। এখন আরেকটা ধারা—‘নো কার্বস’। ভালো কার্বস, রিচ ফাইবার শরীরের জন্য উপকারী। আলু থেকেও অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আমি তো পেট ভরে জিরা-আলু খাই।

আজ আপনার অ্যাপের মাধ্যমে যোগব্যায়াম আরও মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। আপনার পরিবার, অর্থাৎ আপনার স্বামী ও পুত্র কি যোগচর্চা করেন?

শিল্পা শেঠি: আমার স্বামী যোগব্যায়াম করে। আর এর মাধ্যমে ও আট কেজির মতো ওজন ঝরিয়েছে। তবে ওকে আরও ঝরাতে হবে। আমরা একসঙ্গে যোগ করতে পারি না। কারণ, ও সবে শুরু করেছে। আর আমি অ্যাডভান্স লেভেলে পৌঁছে গেছি। আগে যোগব্যায়ামের প্রতি ওর খুব একটা আগ্রহ ছিল না। আর আমাকেও খুব একটা পাত্তা দিত না। তবে এখন ও দেখেছে যে এর মাধ্যমে শারীরিক এবং মানসিকভাবে কতটা উপকৃত হওয়া যায়। যোগ ওর জীবনে দারুণ প্রভাব ফেলেছে। এখন যোগে ও অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আসলে এটা একটা অভ্যাসের মতো। এটা ছাড়া একটা দিন ভাবা যায় না। আমার ছেলেও যোগব্যায়াম করে। আর ও খুব সহজেই করে। আসলে এই বয়সে শরীরে নমনীয়তা থাকে। আমি মনে করি, প্রতিটি স্কুলে যোগব্যায়ামের একটা সেশন থাকা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

আপনাদের সফল দাম্পত্যের রহস্য কী?

শিল্পা শেঠি: বন্ধুত্ব এবং বিশ্বাস। আমার মনে হয়, প্রতিটি বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট থাকতে পারে এই দুটি বজায় থাকলে। এ ছাড়া আর কোনো রহস্য নেই আমাদের দাম্পত্যে।

এই প্রজন্মের ব্যায়ামাগার বা জিমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। এ সম্পর্কে কিছু বলতে চান?

শিল্পা শেঠি: আমার মনে হয়, যুব সম্প্রদায় ধীরে ধীরে যোগব্যায়ামের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। আসলে যোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা আছে। আগে সেসব দূর করতে হবে। অনেকে ভাবে, যোগব্যায়াম ওজন কমাতে সাহায্য করে না। আর যোগ করতে হলে শরীরে নমনীয়তা থাকা জরুরি। আপনি যেটাই ধৈর্য ধরে করবেন, সেটাই আপনাকে সাহায্য করবে। যোগ আন্তর্জাতিক স্তরে যাওয়ার আগে আমি এর দ্বারা প্রভাবিত। তবে আমি আজও অনেক আসন পারি না। আগে নিজের মনকে প্রস্তুত করতে হবে। নিজেকে বলতে হবে আমি এটা পারব। আর এটা সম্ভব অনুশীলনের মাধ্যমে। আমি খুবই গর্বিত যে আমাদের মোদিজি (ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) যোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলছেন। আমি অনেক দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রয়াসের প্রশংসা করে একটা চিঠি তাঁর উদ্দেশে লিখেছিলাম। যোগ আমাদের দেশের। আর এখন পাশ্চাত্যের মানুষেরা আমাদের থেকে বেশি যোগব্যায়াম চর্চা করে। ম্যাডোনা, জেনিফার লোপেজ যোগ করেন। তাঁদের জীবনে এটি দারুণ প্রভাব ফেলেছে।

শিল্পা শেঠির ফিটনেস অ্যাপ নামানোর ঠিকানা: