অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

মেরুদণ্ডের ব্যথা ও প্রতিকার

বলা হয়, কোনো না কোনো ব্যথায় ভোগে না, এমন কোনো মানুষ পৃথিবীতে নেই। এর মধ্যে ৯৯ ভাগই মাথাব্যথা। এ বিষয়ে প্রচলিত প্রবাদ হচ্ছে, মাথা থাকলে ব্যথা হবেই। দ্বিতীয় ব্যথা হচ্ছে, মেরুদণ্ডের ব্যথা। মেরুদণ্ডের ব্যথা বলতে বোঝায় ঘাড়, কোমর ও পিঠে ব্যথা। পৃথিবীজুড়ে ৪০–৫০ ভাগ মানুষ এই ব্যথায় ভোগেন।

ডা. বিলকিস ফাতেমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রব

প্রথম আলো আয়োজিত এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ব্যথার সাতকাহনে এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করেন অতিথিরা। ২১ নভেম্বর প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানের ষষ্ঠ পর্ব। এ পর্বের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মেরুদণ্ডের ব্যথা ও প্রতিকার’। ডা. বিলকিস ফাতেমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রব।

অনুষ্ঠানটি প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ ছাড়া সম্প্রচারিত হয় এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ডা. মো. আবদুর রব আলোচনা করেন মেরুদণ্ডের ব্যথা কী এবং এর কারণ সম্পর্কে। তিনি বলেন, মেরুদণ্ডের ব্যথাকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা হয়। ঘাড়ের ব্যথা, পিঠের ব্যথা, কোমরের ব্যথা এবং কক্কিস বা মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তে ব্যথা। অধিকাংশ রোগী আসেন ঘাড়ে ও পিঠে ব্যথা নিয়ে। পিঠ এবং কোমরের ব্যথা সাধারণত জীবনযাপনের অসঙ্গতির জন্যে হয়। যেমন অফিসে দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে কাজ করলে, দীর্ঘসময় ড্রাইভিং করলে বা বেশি সামনে ঝুঁকে গাড়ি চালালে। ড্রাইভিংয়ের সময় পেছনে কিছু সাপোর্ট নেওয়া উচিত।

চেয়ারে ঠিকমতো না বসলে কিংবা সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে কোমরে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। যাঁরা শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা অন্য কাজ করেন, তাঁদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয়। অনেকেই আছেন যাঁরা কোনো ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলেন না। ফলে মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়।

আবার মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। এটি পূরণ হয়ে থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে। এ ডিস্ক যদি কোনো কারণে বের হয়ে যায়, তখন স্নায়ুমূলের ওপর চাপ ফেলে। এর ফলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। বড় কোনো আঘাতের ইতিহাস থাকলে, কোমরব্যথার পাশাপাশি বুকে ব্যথা হলে, রোগীর আগে কখনো যক্ষ্মা হয়ে থাকলেও বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে।

এ ছাড়া কিছু রোগের জন্যও কোমর বা পিঠে ব্যথা হয়। যেমন ক্যানসার, অস্টিওপোরোসিস, এইডস, দীর্ঘকাল স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবনের ইতিহাস থাকলে কোমর ব্যথাকে অবহেলা করা চলবে না। ব্যথার পাশাপাশি জ্বর, শরীরের ওজন হ্রাস, অরুচি, অতিরিক্ত ঘাম ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে এবং ব্যথা কোমর ছাড়িয়ে পায়ের দিকে বিশেষ করে এক পায়ের হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ছড়ালে অথবা এক পায়ে তীব্র ব্যথা বা অবশভাব হলে সতর্ক হতে হবে। প্রস্রাব বা পায়খানার সমস্যা, মলদ্বারের আশপাশে বোধহীনতা, মেরুদণ্ডে বক্রতা, পায়ের দুর্বলতা বা পায়ের মাংসপেশির শুষ্কতা ইত্যাদি উপসর্গকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

এরপর দর্শকদের নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি নানান সমস্যা নিয়ে কথা বলেন ডা. মো. আবদুর রব। একজন দর্শক জানতে চান স্পাইনা বাইফিডা বিষয়ে। মো: আবদুর রব এ বিষয়ে বলে, এটি একটি জন্মগত ত্রুটি। নিউরাল টিউব নামক একটি ভ্রুণাঙ্গের ত্রুটির কারণে এটি হয়। এতে জন্ম নেওয়া শিশুর ভার্টিব্রা নামক হাড়ের পেছনের অংশ অসম্পূর্ণভাবে জোড়া লাগানো থাকে। অনেক রোগী মনে করেন এর কারণে মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়। তবে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রতীকী ছবি

সবশেষে অধ্যাপক মো: আবদুর রব মেরুদণ্ড ভালো রাখতে বেশ কিছু পরামর্শ দেন। নিয়মিত ব্যায়াম অথবা হাঁটার অভ্যাস করা, ঘাড়ে ভারী কিছু না ওঠানোর কথা বলেন। তিনি বলেন, নিতান্তই দরকার হলে ভারী জিনিসটি শরীরের কাছাকাছি এনে কোমরে চাপ না দিয়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে। যাঁরা ঘরের কাজ করেন, তাঁরা নিয়ম মেনে কাজ করবেন। বেশি ঝুঁকে বা কোমরে চাপ দিয়ে কাজ করবেন না। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একই ভঙ্গিমায় একই জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকা যাবে না। ঘুমের সময় সোজা হয়ে ঘুমাতে হবে। ভালো খাবার খেতে হবে। মেরুদণ্ড হচ্ছে গাছের মতো, এটির সঠিক পরিচর্যা করতে হবে।