জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে মাথাব্যথায় ভোগেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিছু মাথাব্যথা থেকে খুব সহজে নিস্তার পাওয়া যায়, আবার কিছু ব্যথা আমাদের জন্য বিপদ নিয়ে আসতে পারে। তাই আমাদের সবারই উচিত মাথাব্যথা নিয়ে সতর্ক থাকা।
চলছে মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা নিয়ে সচেতনতা সপ্তাহ। এ উপলক্ষে এসকেএফ নিবেদিত বিশেষ আয়োজন ‘মাথা নিয়ে মাথাব্যথা’ অনুষ্ঠানে সপ্তাহব্যাপী আমরা জানতে পারব বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে। অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্ব ৬ সেপ্টেম্বর একযোগে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল এবং এসকেএফের ফেসবুক পেজ থেকে। বিষয় ছিল ‘স্ট্রোক ও মস্তিষ্কের রক্তনালির রোগজনিত মাথাব্যথা’। এ পর্বের অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শিরাজী শাফিকুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন ডা. শ্রাবণ্য তৌহিদা।
প্রথমেই জানা গেল মাথাব্যথার কারণ সম্পর্কে। অনেক কারণেই মাথাব্যথা হতে পারে। মাথার চামড়া, মাংস, হাড্ডি, মস্তিষ্কের পর্দা বা মেনিনজেস, মস্তিষ্কের রক্তনালি, এমনকি মাথার ভেতর থাকা তরল পদার্থে—সিএসএফ বা সেরেব্রস্পাইনাল ফ্লুইড—যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে মাথাব্যথা হতে পারে।
এ ছাড়া জীবনযাপনের পদ্ধতিও কখনো কখনো মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন এখন করোনার জন্য কম্পিউটার আর স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়ে গেছে।
অনেককে শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করতে দেখা যায়। আবার অনেকের ডেস্কটপের পজিশন ঠিক থাকে না। এ রকম বিরতিহীনভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করলে ঘাড়, চোখ ও মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয়। এ জন্য মাথাব্যথা হতে পারে।
এখন ছোট শিশুরা স্মার্টফোনে ক্লাস করছে আবার গেমসও খেলে। ফোনের দিকে টানা তাকিয়ে থাকলে বা ছোট লেখা পড়লে মস্তিষ্কে উদ্দীপনা হয়ে থাকে। এটিও মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। অনেকের সাইনোসাইটের সমস্যা থাকে। তারা যদি অনেকক্ষণ এসির ভেতর থাকে বা গরমে ঘেমে গিয়ে ঘাম না মুছে সরাসরি এসি রুমে ঢুকে যায় বা গোসল করে ফেলে অথবা ঠান্ডা পানি পান করে, তাহলে তাদের মাথাব্যথা হতে পারে। প্রচণ্ড স্ট্রেসে মাথার মাংসপেশিগুলো টান টান হয়ে যায়। তাই কাজের চাপ অথবা স্ট্রেসের জন্য অনেকের মাথাব্যথা হয়। চোখ ও ঘাড় দুটিই মাথার সঙ্গে সম্পর্কিত। কোনো কারণে চোখ বা ঘাড়ে ব্যথা হলেও মাথাব্যথা হতে পারে।
এখন ছোট শিশুরা স্মার্টফোনে ক্লাস করছে আবার গেমসও খেলে। ফোনের দিকে টানা তাকিয়ে থাকলে বা ছোট লেখা পড়লে মস্তিষ্কে উদ্দীপনা হয়ে থাকে। এটিও মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। অনেকের সাইনোসাইটের সমস্যা থাকে। তারা যদি অনেকক্ষণ এসির ভেতর থাকে বা গরমে ঘেমে গিয়ে ঘাম না মুছে সরাসরি এসি রুমে ঢুকে যায় বা গোসল করে ফেলে অথবা ঠান্ডা পানি পান করে, তাহলে তাদের মাথাব্যথা হতে পারে।
এর ভেতর স্ট্রোকে মাথাব্যথা হয়ে থাকে রক্তনালির সমস্যার জন্য। স্ট্রোক মূলত দুই ধরনের। এক, রক্তনালি বন্ধ হয়ে স্ট্রোক আর অন্যটি রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে স্ট্রোক।
সাধারণত, রক্তনালি ছিঁড়ে গেলে এর থেকে নির্গত রক্ত মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়লে মস্তিষ্ক এবং এর আশপাশে থাকা সংবেদনশীল পর্দা বা মেনিনজেসে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। তখন এই মেনিনজেস থেকেই ব্যথা অনুভূত হতে থাকে।
আবার মস্তিষ্কে রক্তনালির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে ওই অংশে কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং জায়গাটি ফুলতে থাকে। ফুলে যাওয়ার জন্যও মেনিনজেসে চাপ পড়ে আর চাপ পড়লেই ব্যথা হয়ে থাকে। অনেক সময় মস্তিষ্কের রক্তনালি বেলুনের মতো ফুলেফেঁপে ওঠে। একে বলে ব্রেইন অ্যানিউরিউজম। এর জন্যও মাথাব্যথা হতে পারে।
এমআরআই বা এমআরএ করে এটি ধরা পড়লে রোগীদের সাধারণত কোয়েল এম্বোলাইজেশন করা হয়। এভিএম (আরটারিওভেনাস ম্যালফরমেশন) বা রক্তনালিতে জটলা সৃষ্টি হলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। এ কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এ ধরনের সমস্যায় সাধারণত চিকিৎসকেরা এন্ডোভাস্কুলার ট্রিটমেন্ট করে থাকেন। তাই প্রচণ্ড বা তীব্র অসহনীয় মাথাব্যথা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
তীব্র মাথাব্যথা ছাড়াও যদি ব্যথার সঙ্গে চোখে ব্যথা, বমি, খিঁচুনি, হাত–পা বা শরীরের কোনো অংশ যদি অবশ হয়ে যায় বা প্রচণ্ড ব্যথায় যদি কেউ অজ্ঞান হয়ে যায়, তাহলে অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
আবার কিছু ব্যথা আমরা নিজেরাই সারিয়ে ফেলতে পারি। এ জন্য ওষুধেরও কোনো প্রয়োজন হয় না। সে জন্য আমাদের জীবনযাপনের পদ্ধতি পাল্টালেই হবে। যেমন টানা স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের সামনে না থেকে বিশ্রাম নিয়ে ব্যবহার করা। বিশ্রাম নিলে সহজেই মাথাব্যথা কমে যায়। পাশাপাশি কাজের সময় আধা ঘণ্টা পরপর পাঁচ মিনিটের জন্য ঘাড়ের ব্যায়াম করা উচিত। কোনো অবস্থাতেই শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করা যাবে না।
কিছু ব্যথা আমরা নিজেরাই সারিয়ে ফেলতে পারি। এ জন্য ওষুধেরও কোনো প্রয়োজন হয় না। সে জন্য আমাদের জীবনযাপনের পদ্ধতি পাল্টালেই হবে।
নিজের উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য করে ডেস্কটপের পজিশন ঠিক করা। এ জন্য অকুপেশনাল থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। মাঝেমধ্যে ফিজিওথেরাপি করলে মাথাব্যথার সমস্যা সুরক্ষা পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ডা. শিরাজী শাফিকুল ইসলাম দর্শকদের মাথাব্যথার সমস্যা–সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাব দেন।