মলের সঙ্গে বা পায়ুপথে তাজা রক্ত যাওয়ার ঘটনাকে অনেকেই সাধারণত মামুলিভাবে নেন। কিন্তু তা সব সময় মামুলি থাকে না। কারণ, সাধারণ পাইলস থেকে শুরু করে ক্যানসার পর্যন্ত নানা কারণে পায়ুপথে রক্তপাত হতে পারে। কেন হচ্ছে তার কারণ জানা জরুরি।
মলের সঙ্গে রক্ত সাধারণত তিনভাবে যেতে পারে। তাজা লাল হিসেবে, কালো পায়খানা হিসেবে এবং অদৃশ্য হিসেবে। তাজা লাল ও কালো হিসেবে পায়খানার সঙ্গে গেলে তা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। কিন্তু অদৃশ্যভাবে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া বোঝা যায় না। তবে অনেক খাবার বা ওষুধ আছে যেগুলো সেবন করলে পায়খানার রং কালো হতে পারে। তাই পায়খানার কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অনেক সময় মলের সঙ্গে কালো রঙের পিচ্ছিল রক্ত যায়, যা ফ্ল্যাশ করলেও কখনো কখনো রয়ে যায়। এটি কিন্তু তাজা রক্ত নয়। সাধারণত পাকস্থলী, অন্ত্র বা অন্ত্রের উপরিভাগ থেকে রক্তক্ষরণ হলে তা মলের সঙ্গে কালো আলকাতরার মতো রং ধারণ করে। কিন্তু পায়ুপথে তাজা লাল রক্ত গেলে তা বৃহদন্ত্রের একেবারে নিচের অংশ থেকে আসছে বলে ধরে নিতে হবে। পাইলস, অ্যানাল ফিশার, রেকটাল পলিপ বা রেকটাল ক্যানসার হতে পারে এর অন্তর্নিহিত কারণ।
পাইলস: মধ্য বয়সে পায়ুপথে তাজা রক্তক্ষরণের অন্যতম কারণ পাইলস। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে এবং বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এ রোগের ঝুঁকি বেশি। এতে প্রথম দিকে মলের সঙ্গে ফোঁটা ফোঁটা বা ফিনকি দিয়ে তাজা রক্ত যায়। পরে এক সময় একটি মাংসপিণ্ড গোটার মতো পায়ুপথে বের হয়ে আসে। পাইলস হলে কোষ্ঠকাঠিন্য অবশ্যই দূর করতে হবে। পায়খানা নরম করার জন্য নিয়মিত পর্যাপ্ত শাকসবজি, পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে ওষুধও গ্রহণ করতে হতে পারে। জটিল আকার ধারণ করলে শল্যচিকিৎসাও লাগতে পারে।
রেকটাল পলিপ: এ সমস্যা শিশুদের বেলায় বেশি দেখা যায়। এটিও অনেকটা পাইলসের মতো। মলের সঙ্গে তাজা লাল রক্তক্ষরণ হয়, আবার গোটার মতো পিণ্ড বেরিয়ে আসে। পলিপ সারাতে কাটাছেঁড়াহীন অস্ত্রোপচারই যথেষ্ট এবং পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে বা ফলোআপে থাকতে হয়।
অ্যানাল ফিশার: মলত্যাগের সময় ভীষণ ব্যথাসহ রক্তক্ষরণ হলে তা ফিশারের কারণে হয়েছে বলে ধরা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মলদ্বারের আবরণ ছিঁড়ে গেলে এ সমস্যা হয়। এতে সংক্রমণও হতে পারে। নানা ধরনের ওষুধ ও ক্রিম, গামলায় গরম পানির সেঁক ও ওষুধ এ সমস্যার চিকিৎসা। কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারও লাগতে পারে।
রেকটাল ক্যানসার: ৪০ বছরের পর এই রোগ বেশি হলেও আজকাল অনেকের কম বয়সেও রেকটামে ক্যানসার হচ্ছে। মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ, কখনো ডায়রিয়া, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা, রক্তশূন্যতা, মলত্যাগ করার পরও আরও খানিকটা ইচ্ছে—এসব এর উপসর্গ। জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তনের ফলে এখন অল্প বয়সেই এ ধরনের ক্যানসার হচ্ছে। সুস্থ জীবনযাত্রা যেমন শারীরিক পরিশ্রম, আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদি।
পরিশেষে বলা যায়, মলের সঙ্গে রক্ত গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো উচিত।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল