টেনটোরিয়াম নামক একটি পর্দা দিয়ে আমাদের ব্রেন বা মস্তিষ্ক দুটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত—ওপরের প্রকোষ্ঠ ও নিচের প্রকোষ্ঠ। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ওপরের প্রকোষ্ঠে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ টিউমার হতে পারে এবং নিচেরটিতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। আর শিশুদের ক্ষেত্রে ওপরের প্রকোষ্ঠে ৪০ শতাংশ এবং নিচেরটিতে ৬০ শতাংশ টিউমার হতে পারে।
ব্রেন টিউমার প্রধানত দুই ধরনের।
১. বেনাইন টিউমার, যা ক্যানসার নয় এবং
২. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যানসার–জাতীয় টিউমার।
ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যানসার–জাতীয় টিউমার আবার দুই ধরনের।
১. প্রাথমিক ম্যালিগন্যান্ট, যা মস্তিষ্কের মধ্য থেকে উৎপত্তি হয়ে থাকে।
২. মেটাস্টেটিক, যা শরীরের অন্য জায়গায় উৎপন্ন হয়ে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।
মানবশরীরে কিছু জিন আছে, যা টিউমার হওয়ার প্রক্রিয়াকে প্রতিরোধ করে। এদের বলে টিউমার সাপ্রেসর জিন। কোনো কারণে টিউমার সাপ্রেসর জিন যদি যথাযথ কাজ না করে, তাহলে ব্রেন টিউমার হয়ে থাকে।
ব্রেন টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণ মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা। তবে মাথাব্যথা মানেই ব্রেন টিউমার নয়। সাধারণত মাথাব্যথার ১ শতাংশেরও কম কারণ হলো ব্রেন টিউমার।
ব্রেন টিউমারের জন্য যে মাথাব্যথা হয়, তা সাধারণত খুব ভোরে শুরু হয়। সঙ্গে খিঁচুনি হতে পারে। খিঁচুনি সাধারণত হাতে বা পায়ে বা অন্য কোনো স্থান থেকে শুরু হয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই মাথাব্যথা কিছুতেই যেতে চায় না।
মস্তিষ্কের ভেতর পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে টিউমার হলে রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। রোগী সামনের অংশটুকু ভালো দেখতে পেলেও দুপাশে দেখতে পান না এবং একপর্যায়ে অন্ধ হয়ে যান।
ব্রেনের সামনের অংশে বা ফ্রন্টাল লোবে টিউমার হলে রোগীর স্মৃতিশক্তি কমে যায়। তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করেন। দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।
মটর এরিয়ায় টিউমার হলে যেদিকে টিউমার তার উল্টো দিকে প্যারালাইসিস হয়ে থাকে।
মস্তিষ্কের খুলির নিচের প্রকোষ্ঠে টিউমার হলে রোগী হাঁটতে গেলে পড়ে যান বা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। কানে ঠিকমতো শোনেন না। কথা স্পষ্ট করে বলতে পারেন না।
টিউমার বেশি বড় হয়ে গেলে রোগীর হঠাৎ মৃত্যুও হতে পারে।
ব্রেন টিউমার শনাক্তে এমআরআই করতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান করতে হয়।
ব্রেন টিউমার প্রতিরোধ করার সুনির্দিষ্ট কোনো উপায় নেই। তবে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
তেজস্ক্রিয় বিকিরণ যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। যেমন মুঠোফোনের ব্যবহার কমানো। তেজস্ক্রিয় স্থান বা উৎস থেকে দূরে থাকা।
খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিলে এবং নিয়মিত প্রচুর ফলমূল ও শাকসবজি খেলে ক্যানসার থেকে দূরে থাকা যায়।
মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে ব্রেন টিউমারের অস্ত্রোপচার করা হয়। এন্ডোস্কপির সাহায্যে খুলি না কেটে নাকের ছিদ্র দিয়ে পিটুইটারি টিউমারের অস্ত্রোপচার করা হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব।
অধ্যাপক ডা. হারাধন দেব নাথ, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়