মহামারিকালে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রেখে ফিট থাকা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এসকেএফ নিবেদিত ও প্রথম আলোর সহযোগিতায় ‘আর নয় মাথাব্যথা’ শীর্ষক আয়োজনের প্রথম পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও কনসালট্যান্ট ডা. সাকলায়েন রাসেল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরী। তাঁরা আলাপ করেছেন শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে।
উচ্চ রক্তচাপের সমাধান
আমরা একটা ভয়ংকর দুঃসময় পার করছি। নানান দুশ্চিন্তার ভেতর থেকে আমাদের মাথাব্যথা হয়। প্যালপিটিশন, মানসিক চাপ বাড়ে। উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এমন সময় উচ্চ রক্তচাপের কারণে যে ওষুধগুলো চলছিল, নিয়মমতো, সময়মতো সেগুলো চলবে। লবণজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ যাঁদের আছে, করোনায় তাঁরা স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ খেয়েছিলেন। সেই ওষুধ আবার উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। হাঁটাচলা করা, মন ফুরফুরে রাখার কোনো বিকল্প নেই। ইচ্ছা থাকলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কিছু নয়। প্রতি বেলায় প্রেশার মাপার দরকার নেই। বেশি দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ারও কিছু নেই। সবাইকে যে জিমে যেতে হবে, এমনটাও নয়। ঘরেই চলতে পারে কায়িক পরিশ্রম।
অযথা প্রেশার মাপার দরকার নেই। প্রেশার মাপাটাও একটা গুরুদায়িত্ব। কেউ যদি কোনো একটা দুঃসংবাদ শুনে দৌড়ে এসে প্রেশার মাপে, তাহলে এমনিতেই বেশি দেখাবে। আর সেই প্রেশার দেখে সে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে। হার্টবিট স্বাভাবিক হওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত রোগীর সঙ্গে গল্প করে, তারপর স্বাভাবিক অবস্থায় প্রেশার মাপা উচিত। প্রতি বেলায় প্রেশার মাপলে একই ধরনের দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা কাজ করবে। এতে আরও প্রেশার বাড়তে পারে। আবার প্রেশার মাপার মেশিনের কোনো জটিলতার জন্যও এররও আসতে পারে। ঠিকঠাক রিডিং পাওয়াটা খুবই জরুরি। অযথা আতঙ্কের দরকার নেই। কারও প্রেশার যদি সব সময় বেশি থাকে, ঘাড়ব্যথা, মাথাব্যথা হয়, তখন ওষুধ খান। করোনার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। এখন যেমন করোনা অতিমারি চলছে, একইভাবে তথ্যেরও মহামারি চলছে। তাই করোনা নিয়ে সারা দিন খবর না দেখে বরং যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনযাপন করে যাওয়াটাই সঠিক হবে।
সাধারণ মানুষেরা নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নানা কিছু করছেন। কিন্তু ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে সামনে থেকে চিকিৎসকেরা যুদ্ধ করছেন। ইতিমধ্যে অনেক চিকিৎসক মারা গেছেন। তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। অনেক চিকিৎসক এ পেশা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার আরও বড় চ্যালেঞ্জ। কোনো অবস্থায় চিকিৎসকদের মনোবল হারালে চলবে না বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান। বলেছেন, যতটা সম্ভব সব সহযোগী পেশাজীবী মানুষকে সঙ্গী করে এই কঠিন সময়ের মোকাবিলা করতে হবে। সবাই মিলে আমরা নিশ্চয়ই এই মহামারিকাল পার করতে পারব।
ডা. সাকলায়েন রাসেল জানান, তাঁর মাথাব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা আর মনে ব্যথা, যা–ই হোক না কেন, তিনি আগে একটা দৌড় দিয়ে আসেন। অ্যাংজাইটি লেভেল যাতে না বাড়ে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ব্যায়াম করলে বা দৌড়ালে এনড্রোফিন নামের হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন প্রায় সব অসুখের বিরুদ্ধে কাজ করে। তাই যা–ই হোক না কেন, দৌড়ালে আমাদের ভালো লাগে। এ ছাড়া যার যে কাজ করতে ভালো লাগে, মহামারিকালে সেটি করলে ভালো হবে। যে যে ধর্মের, সেই অনুশাসন মেনে চললেও মনের ভেতর একটা ভালো অনুভূতি দেবে। বর্তমানে বাঁচতে হবে। কাল কী হবে, সেটা পরের চিন্তা। প্রতিদিন যেই সময়ে যে কাজ করেন, সেই সময়ে সেই কাজটিই করতে হবে। শারীরিক আর মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য এ কাজগুলো করতে হবে।
বিকেলের দিকে এক্সারসাইজ করলে ঘুম চলে আসে। ক্যাফেইনজাতীয় কোনো খাবার যেমন চা বা কফি, সেগুলো ঘুমের অন্তত তিন ঘণ্টা আগে থেকে বন্ধ করতে হবে। ঘুমানোর বিছানায় অন্য কিছু করা যাবে না। ঘুমের দুই ঘণ্টা আগে সব গেজেট মোবাইল বা ল্যাপটপ বন্ধ করে দিতে হবে। আর এসব করার পরও কিছু না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে, বলেছেন অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান।
কোলেস্টেরল হলো সভ্যতার মহামারি। এটি বড় বড় অসুখের জন্ম দেয়। কোলেস্টেরলের সঙ্গে জীবনযাপনের একটা বড় সম্পর্ক আছে। মহামারিকালে আমাদের শুয়ে থাকার প্রবণতা বেড়ে গেছে। পার্কগুলো খুলে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। রেড মিট যতটা কম খাওয়া যায়, ভালো। চামড়াজাতীয় খাবার, প্রসেসড খাবারে কোলেস্টেরল থাকে। আপনার শরীরে যদি কোলেস্টেরল জমে, তাহলে সেটা বার্ন করে ফেলতে হবে। এ জন্য সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৪০ মিনিট ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করতে হবে। মোটা হলেই যে কোলেস্টেরল আর চিকনদের কোলেস্টেরল নেই, বিষয়টা সব সময় এমন নয়। আঠারো বছরের একজন পাতলা তরুণেরও হার্টে ব্লক হতে পারে।
* ঘরের ভেতর হাঁটা
* সম্ভব হলে ঘরের ভেতর হালকা দৌড়ানো
* অনলাইনে যোগাসন করা
* ট্রেডমিলে দৌড়ানো
* ছেলে হোক মেয়ে হোক, ঘরের কাজ করাটাও বড় ঘরোয়া ব্যায়াম
* নিজেকে সৃষ্টিশীল কাজে জড়িত রাখা
* ঠিকমতো ঘুমানো
* স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি পার্কগুলো খোলা যায়, ভালো হয়
ডায়াবেটিস, কিডনি বা হার্টের অসুখ যাঁদের আছে, তাঁরা নিশ্চিন্তে টিকা নিতে পারবেন। তবে যাঁরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তাঁরা নিতে পারবেন না। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়ে নিতে পারবেন। করোনা নিয়ে প্যানিক না করে যথাসম্ভব স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে হবে।