অনলাইনে স্বাস্থ্যবিষয়ক ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে ডিজিটাল হসপিটালের সরাসরি অনুষ্ঠান ‘হ্যালো ডক্টর’। ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হলো এই আয়োজনের দশম পর্ব। এদিন ‘প্লাটিলেট কমে যাওয়া’ শিরোনামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ক্যানসার রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালের রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. গুলজার হোসেন। এ ছাড়া তিনি রাজধানীর প্রগতি সরণির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের হেমাটোলজিবিষয়ক কনসালট্যান্ট। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শ্রাবণ্য তৌহিদা।
প্লাটিলেট কী, কেন জরুরি
শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক প্লাটিলেট কী। রক্তের প্রধান উপাদান দুটি। একটি রক্তকোষ। আরেকটি রক্তের জলীয় অংশ, রক্তরস। আমাদের রক্তে তিন ধরনের কোষ আছে। লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেতরক্তকণিকা আর অণুচক্রিকা। এই অণুচক্রিকার কাজ হচ্ছে রক্ত জমাট বাঁধা। রক্ত জমাট বাঁধতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এটি। তাই কোথাও কেটে গেলে যাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ না হয়, সে জন্য প্লাটিলেট জরুরি। যখন প্লাটিলেট কমে যায়, একটা নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে চলে যায়, তখন কিছু লক্ষণ দেখা যায়। চামড়ার নিচে লাল লাল র্যাশ দেখা দেয়। দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে পারে। নারীদের পিরিয়ডের সঙ্গে অতিরিক্ত রক্ত বেরিয়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণও হতে পারে। তবে খুব কম ক্ষেত্রে এমন হয়। আর কোথাও কেটে গেলে কারও ছোপ ছোপ দাগ হয়।
কখন কখন প্লাটিলেট কমে যায়
ডেঙ্গু জ্বরে প্লাটিলেট কমে যায়। হেপাটাইটিস বি-তেও কমে। কিছু ভাইরাসের আক্রমণেও কমে যায়। যেমন করোনাতেও কমে। এ ছাড়া ব্ল্যাড ক্যানসারে (লিউকোমিয়া) প্লাটিলেট কমে। অন্যান্য ক্যানসার যদি ছড়িয়ে অস্থিমজ্জা পর্যন্ত চলে আসে, তাহলেও প্লাটিলেট কমে যেতে পারে। কেমোথেরাপি দিলে এর প্রভাবে প্লাটিলেট কমে। রেডিও থেরাপিতেও কমে। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধেও কমে। আইটিপির মতো কিছু অটো ইমিউন ডিজিজেও কমে। এসব ক্ষেত্রে শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, সেটি প্লাটিলেট নষ্ট করে ফেলে।
কখন বুঝবেন প্লাটিলেট কমে গেছে
যে উপসর্গগুলো দেখা দিলে রোগীকে অনতিবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শরীরে লাল লাল র্যাশ দেখা গেলে, শরীরের জয়েন্টগুলোতে কালো দাগ দেখা দিলে খেয়াল রাখতে হবে। আর যদি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়, সে ক্ষেত্রে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। তাই উপসর্গগুলো টের পাওয়া যায়। প্লাটিলেটের স্বাভাবিক রেঞ্জ দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। এক লাখ থাকলেও কোনো অসুবিধা নেই। ৫০ হাজারেও কিছু হয় না। তবে লাখের নিচে গেলেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ৫০ হাজারের নিচে গেলে অ্যাকটিভ ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন হবে। মূলত রক্তক্ষরণ হয় ১০ হাজারের নিচে নামলে। এরপরই কেবল ডাক্তাররা আলাদা করে প্লাটিলেট দেন।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণ শারীরিকভাবে দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর থাকলে আর প্লাটিলেট ৫০ হাজারের বেশি কমে গেলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। ৩০ হাজারের বেশি কমে গেলে প্লাটিলেট নিতে হবে, এমন মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে।
প্লাটিলেট বেড়ে গেলে
অনেক রোগে প্লাটিলেট বেড়ে যায়। তখন শিরা বা ধমনিতে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। তখন স্ট্রোক হয়, হার্ট অ্যাটাক হয়। রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া থেকে ভয়ংকর কিছু ঘটে যেতে পারে। এটি মারাত্মক খারাপ। প্লাটিলেট ৯ লাখের বেশি হয়ে গেলে হেমাটোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলে ওষুধ খেতে হবে। তবে প্লাটিলেট বেড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে খুবই কম।
কী খেলে প্লাটিলেট বাড়বে?
এই মুহূর্তে ডাক্তারদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যে কোন খাবারে প্লাটিলেট বাড়বে। কয়েক বছর ধরে ডাক্তারদের ভেতর ফিসফাস চলে যে পেঁপে, পেঁপে পাতার রস এগুলো খেলে প্লাটিলেট বাড়ে। কিন্তু পেছনে বড় কোনো আর্টিকেল নেই, প্রমাণ নেই। তবে কিছু কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে, পেঁপে প্লাটিলেট বাড়ায়। এটা ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে করলার মতো আরকি। ডায়াবেটিস হলে আপনি করলা খেতে পারেন। এতে কোনো ক্ষতি নেই। তবে অনেকে বিশ্বাস করে, করলা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকতে সুবিধা হয়। যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এমনিতেই পুষ্টিকর খাবার খাবেন। ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন কে, ই এগুলো খাবেন। পাতাসমৃদ্ধ শাক, রঙিন ফল খেলে রক্তের উপাদানগুলো সঠিক মাত্রায় আরও ভালো থাকবে।
বিজ্ঞাপন বার্তা