পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: আমি যুক্তরাষ্ট্রে থাকি প্রায় আট বছর ধরে। সেখানে থাকার সময়ে বাংলাদেশের একটি মেয়ের সঙ্গে আমার ফেসবুকে পরিচয় হয়। মেয়েটি তখন স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে পড়ত। প্রায় দুই বছর ধরে তার সঙ্গে কথা বলে আমাদের সম্পর্কটি প্রেমের পথে গড়ায়। আমি তাকে খুব ভালোবাসতাম। বিদেশ থেকে নিয়মিত উপহার পাঠাতাম। সে আমার কাছে দু–তিনবার তার সেমিস্টারের টাকা চেয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। যখন যা চাইত আমি আমার সাধ্যমতো তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
কথা ছিল আমি দেশে এলে আমাদের দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হওয়ার। হঠাৎ–ই সে আমাকে এড়িয়ে চলতে থাকে। আগের মতো ফোনে কথা বলতে চায় না। ভিডিও কল করলে সে ধরে না। নানা অজুহাতে এড়িয়ে যায়। একদিন সে জানায়, আমার সঙ্গে সে আর সম্পর্ক রাখতে পারবে না। তার পরিবার থেকে অন্য এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেছে। এসব শুনে আমি খুব ভেঙে পড়ি। আমি বারবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। সে ফোনে, ফেসবুকে আমাকে ব্লক করে দেয়। এর মধ্যে ওর এক বান্ধবীর কাছ থেকে জানতে পারি সে অন্য একজনকে বিয়ে করেছে। যাকে আমি এত ভালোবেসেছি তার প্রতারণা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আমার কী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ আছে?
নাভিদ, যুক্তরাষ্ট্র।
উত্তর: একটি মেয়ের সঙ্গে আপনার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এখন সে অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করেছে। আপনি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছেন। আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই।
আপনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাকে উপহার দিতেন। প্রেম–ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহারের আদান–প্রদান ভালোবাসা প্রকাশের একটি মাধ্যম। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহারের দেওয়া–নেওয়া হলে সেটিকে আইনগত জটিলতার মধ্যে না আনাই ভালো। ভালোবেসে কাউকে কিছু দিয়ে সেটি ফেরত চাওয়া বা আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাওয়া একটি নৈতিকতা ও শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ।
প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রেই ভাঙন আসতে পারে। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা দুই পক্ষেরই করা উচিত। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি, কাউকে ফাঁকি দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধুভাবে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো অর্থ সম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করে, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করে, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেটি প্রতারণা হবে।
দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তার কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করে সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এই অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। কাজেই আপনার প্রেমিকা যদি আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করে এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করে, তারপর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেয় বা অন্য কোনো ক্ষতি করে, তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, মেয়েটি অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। কেননা কোনো সম্পর্ক ভেঙে গেলে যেকোনো এক পক্ষ প্রতারিত বোধ করতেই পারে। তবে আইনের চোখে তা প্রতারণা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর
আইন, ডায়েট এবং মন–সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্ন পাঠক পাঠাতে পারেন। প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো,
প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫।
(খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA