বিশ্বে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান বেড়েই চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার ছিল ২০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০১৪ সালে ৩২ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়ায়। জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশেও প্রায় একই রকম অনুপাতে বেড়েছে। বাংলাদেশের হিসাবে বর্তমানে এই হার প্রায় ৩০ শতাংশ। সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের অস্বাভাবিক হার বৃদ্ধির পেছনে মায়ের সার্বিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থান, সেবাদানকারী ও চিকিৎসার প্রতুলতা, আইন ইত্যাদি যুক্ত।
হবু মায়েদের সন্তান প্রসবে অতিরিক্ত ব্যথাভীতি একটি বড় কারণ। প্রসবব্যথার তীব্রতা এত বেশি যে এতে শারীরিক ও মানসিক ভীতির সঞ্চার হয়। প্রথম সন্তানের বেলায় এই ভয় আরও বেশি কাজ করে।
ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক প্রসব বিভিন্ন পদ্ধতিতে করা যায়। এর মধ্যে এপিডুরাল পদ্ধতি অন্যতম। এতে সবকিছুই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় রেখেই সন্তান প্রসব করানো হয়। কোনো অস্ত্রোপচারের দরকার পড়ে না। তবে অন্যান্য স্বাভাবিক প্রসবে মায়ের যে ব্যথা বা লেবার ব্যথা হয়, এখানে সেই ব্যথা হবে না। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখেন অবেদনবিদ (অস্ত্রোপচারের সময় রোগীকে সংজ্ঞাহীন করেন যে চিকিৎসক)। অবেদনবিদ চিকিৎসক এ ক্ষেত্রে কোমরে একটি ইনজেকশন দেন। যার ফলে রোগী কোনো ধরনের ব্যথা অনুভব করেন না। কিন্তু তাতে শিশুর মাথা স্বাভাবিকভাবে নিচে নামা, স্বাভাবিকভাবে প্রসব হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয় না। এই ইনজেকশন কোমরের ওই জায়গায় স্থানীয়ভাবে কাজ করে। ইনজেকশন দেওয়ার পর রোগী স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারবেন। বাথরুমেও যেতে পারবেন। তিনি তাঁর সন্তানের নড়াচড়াও বুঝতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে রোগীকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এই পদ্ধতিতে মায়ের ও নবজাতকের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। তা ছাড়া ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহৃত ওষুধ মা থেকে শিশুর রক্তে প্রবাহিত হয় না বা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। পদ্ধতিটি খুবই সহজ। এতে দ্রুত ব্যথা কমানো যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে ব্যথা কম থাকে। প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার লাগলে দ্রুত অবশ করার ব্যবস্থাও করা সম্ভব। এভাবে স্বাভাবিক প্রসবের পর তাৎক্ষণিক নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানো যায়।
সেবাটি গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশের যেকোনো জেলায় নারীরা গর্ভধারণ করার পর চিকিৎসককে ব্যথামুক্ত প্রসবের ইচ্ছাটি আগে থেকে জানালে একজন বিশেষজ্ঞ অবেদনবিদের পরামর্শ নিতে পারবেন। বিশেষজ্ঞ অবেদনবিদ ছাড়াও মায়ের গর্ভে শিশুর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য যন্ত্রপাতি ও সুবিধাদি থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে দেশে প্রতিটি জেলার বিশেষজ্ঞ প্রসূতি চিকিৎসক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী অবেদনবিদ চিকিৎসক রয়েছেন। প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ সেবা ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করলে সরকারি সব সদর হাসপাতালে এই সেবা চালু করা সম্ভব।