চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি, স্বাস্থ্যসচেতনতা, পুষ্টির উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতার কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। কিন্তু এর সঙ্গে বেড়েছে প্রবীণদের সুস্থ রাখার চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে দেশে দেড় কোটির বেশি প্রবীণ রয়েছেন। তাঁদের প্রয়োজন বাড়তি যত্ন।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুল পাকে। ত্বকে পড়ে বলিরেখা। দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তি কমে যায়। কমে পেশিশক্তিও। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হন অনেকে। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার অভাব, অনিয়মিত ওষুধ সেবনসহ নানা কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস ওঠানামা করে। তাঁদের সিস্টোলিক হাইপারটেনশন বেশি দেখা যায়। এর প্রভাবে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি হতে পারে। অনেকে স্ট্রোক–পরবর্তী জটিলতায় দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকেন।
বয়স্ক পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়ায় প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা, ঘন ঘন প্রস্রাব লাগা, প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে। নারীদের মাসিক বন্ধ হয়ে গিয়ে বিভিন্ন জটিলতা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আলঝেইমারস, ডিমেনশিয়া হলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। পারকিনসনস রোগে হাত–পা কাঁপা, ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। মস্তিষ্কের কোষ হ্রাসে বয়স্কদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বিচার-বিবেচনা, চিন্তাশক্তি, আবেগ–অনুভূতির পরিবর্তন দেখা যায়। দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, ইলেকট্রোলাইট কমে যাওয়া, হাইপোগ্লাইসেমিয়া জাতীয় সমস্যা বয়স্কদের বেশি হয়। প্রবীণদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়ায় যেকোনো সংক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই প্রবীণদের বিষয়ে বেশি সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।
প্রবীণদের কিছু বিষয় অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত:
● স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস এবং যতটুকু সম্ভব নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন।
● অনেকের মাড়ির সমস্যা ও অরুচির জন্য খেতে অসুবিধা হয়। সে জন্য বিশেষ ডায়েট দরকার।
● চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ সেবন করা যাবে না। ঘুমের ও ব্যথার ওষুধ থেকে সতর্ক থাকবেন। বয়স্করা ওষুধ খেতে ভুলভাল করেন। সেদিকেও নজর রাখুন।
● ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির জন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
● যতটা সম্ভব হাসিখুশি ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান।
● যেকোনো শারীরিক সমস্যা পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসককে জানান।
● হাড়ভাঙা, ভারসাম্যহীনতা এড়াতে হাঁটার সময় লাঠি ব্যবহার করুন।
● পরিবারে বয়স্ক সদস্যের দিকে আলাদা নজর দিতে হবে। সময়, ধৈর্য ও ভালোবাসা দিয়ে তাঁদের যত্ন নিতে হবে।
আগামীকাল পড়ুন: হৃদ্বান্ধব তেল
ডা. এ হাসনাত শাহীন, কনসালট্যান্ট, ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগ, ইমপাল্স হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা