করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধলে স্ট্রোক হতে পারে, হৃদ্যন্ত্রে হলে হার্ট অ্যাটাক, ফুসফুসে হলে পালমোনারি এম্বোলিজম। এমনকি পায়ের শিরায়ও রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। একে বলে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা ডিভিটি। পায়ের পেছনে যে বড় শিরা রয়েছে, সেটাতে রক্ত জমাট বাঁধলে তা সরাসরি ফুসফুসে প্রবেশ করে রক্তনালি বন্ধ করে দেয়। একে পালমোনারি এম্বোলিজম বলে। এর ফলে তাৎক্ষণিক তীব্র শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা হয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কাজেই পায়ের রক্ত জমাট বাঁধাকে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিরোধ করা গেলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার কারণ
● দীর্ঘ সময় অচল অবস্থায় বা শয্যাশায়ী থাকা
● অস্ত্রোপচারের পর
● অতিরিক্ত ওজন
● গর্ভাবস্থা
● দীর্ঘ সময় ভ্রমণ
● শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেওয়া বিভিন্ন উপাদানের ঘাটতি
● বংশগত ঝুঁকি
লক্ষণ
● পা ফুলে যাওয়া ও লালচে হওয়া
● পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা
● পায়ের পেছনের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া
● পা অবশ বা ভারী লাগা
প্রতিরোধ
● ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
● করোনার সংক্রমণ থাকুক বা না থাকুক, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটা
● পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
● দীর্ঘ সময় বসে না থাকা। প্রতি এক ঘণ্টা পর কিছু সময়ের জন্য হাঁটাহাঁটি
● ঢিলেঢালা কাপড় পরা
● দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হলে পায়ের পেছনের পেশিতে দুই ঘণ্টা পরপর দুই মিনিট ম্যাসাজ করা।
যদি দীর্ঘ সময় শুয়ে-বসে থাকতে হয়, যেমন আইসোলেশন ওয়ার্ডে বা হাসপাতালের বেডে, তাহলে কিছু ব্যায়াম দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরপর করতে পারেন:
অ্যাঙ্কেল সার্কেল: পা সোজা করে বসে গোড়ালিসহ পায়ের পাতা সামান্য ওপরে তুলে সামনে-পেছনে এবং বৃত্তাকারে ঘোরান। প্রতি ঘণ্টায় ৩০ সেকেন্ড করুন এই ব্যায়াম।
ফুট পাম্পস: সোজা হয়ে বসে গোড়ালি মেঝেতে রেখে পায়ের পাতাসহ আঙুল ওপরে ওঠান-নামান। এবার গোড়ালি ওপরে ওঠান-নামান। এটি ছন্দাকারে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরপর ৩০-৪০ সেকেন্ড করুন।
নি লিফট: হাত ঊরুর ওপর রেখে হাঁটু ভাঁজ করে বুক বরাবর এক পা করে ওঠান-নামান। এটিও দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পরপর ৩০-৪০ সেকেন্ড করুন।
পায়ের আঙুলের ওপর ভর করে দাঁড়ান: সোজা হয়ে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ান। ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন, এবার ছাড়ুন। এভাবে ২ ঘণ্টা পরপর ২০-৩০ বার করুন।
লেখক, ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ