ভালো থাকুন

পারকিনসনস নিয়ে সচেতনতা

পারকিনসনস মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত একটি রোগ। মস্তিষ্কের সাবস্ট্যানশিয়া নাইগ্রা নামক অংশের স্নায়ুকোষ বা নিউরন শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের ঘাটতি দেখা দেয়। স্বাভাবিক অবস্থায় মস্তিষ্কে ব্যাজাল গ্যাংলিয়া শরীরের চলাফেরা, গতি বা নড়াচড়ার সমন্বয় করে থাকে। ডোপামিনের অভাবে এই সমন্বয় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে পারকিনসনস নামের রোগটি দেখা দেয়।

কেন হয়

৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে পারকিনসনসের কারণ অজানা। ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে জেনেটিক কারণকে দায়ী করা যায়। বাকি ২৫ শতাংশ বিভিন্ন কারণে হয়। যেমন মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ, বারবার মস্তিষ্কের আঘাত, মস্তিষ্কে সংক্রমণ, টিউমার, উইলসন ডিজিজসহ মস্তিষ্কের অন্যান্য রোগ।

এ রোগে নারী-পুরুষ সমানভাবে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণত ৬০ বছর বয়সের পরে পারকিনসনস রোগ হয়। তবে জেনেটিক ক্ষেত্রে কম ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সের মধ্যেও যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

উপসর্গ

পারকিনসনসের প্রধান লক্ষণ তিনটি। হাত–পা কাঁপুনি, হাত–পা স্বাভাবিকের চেয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া ও চলাফেরার গতি ধীর হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটা, স্বর ক্ষীণ হয়ে যাওয়া, কম কথা বলা, চোখের পাতার নড়াচড়া কমে যাওয়া ও বারবার পড়ে যাওয়াও এর লক্ষণ। এ লক্ষণগুলোকে বলা হয় মোটর সিম্পটম। এর বাইরে কিছু নন মোটর সিম্পটম আছে। সেগুলো হলো ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা, উদাসীনতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ঘুম কম হওয়া, বারবার প্রস্রাবে চাপ অনুভব করা বা প্রস্রাব আটকে যাওয়া, যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি।

চিকিৎসা

সঠিক সময়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে একজন পারকিনসনস রোগী দীর্ঘদিন ভালো থাকেন। এ জন্য আজীবন ওষুধ খেতে হয়। এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য রোগ নয়।

অস্ত্রোপচারের কোনো ভূমিকা এই রোগের চিকিৎসায় নেই। তবে ডিবিএস (ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশন) পদ্ধতিতে অতি ক্ষুদ্র ইলেকট্রোড মস্তিষ্কের গভীরে স্থাপন করা হয়। এতে ওষুধ অনেক কম লাগে। উপসর্গ ৯০ শতাংশ কমে যায়। রোগী দীর্ঘদিন ভালো থাকতে পারেন। কিন্তু এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ পদ্ধতি আমাদের দেশে সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে।

‘অ্যাডভান্সড পারকিনসনস ডিজিজ’ রোগীর ক্ষেত্রে লিভোডোপা প্যাচ, অ্যাপোমরফিন ইনফিউশন পাম্প এবং লিভোডোপা-কারভিডোপা ইনটেস্টিনাল জেল (এলসিআইজি) রয়েছে। এগুলোও ব্যয়বহুল। ওষুধের পাশাপাশি ব্যায়াম বা ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পারকিনসনস রোগের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হতে পারে।

গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারকিনসনস এর মধ্যে অন্যতম। রোগী নিজে ও পরিবারের সদস্যরা সচেতন হলে রোগী সচল থাকা সম্ভব। এ জন্য রোগীকে সব সময়ই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে যেতে হবে।

ডা. আহসান হাবীব, সহযোগী অধ্যাপক, নিউরোলজি বিভাগ, পারকিনসনস ও মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার বিশেষজ্ঞ, বিএসএমএমইউ