আরও কিছু রোগের মতো যক্ষ্মা বা টিবি পুরুষের তুলনায় নারীর জন্য বাড়তি কিছু সমস্যা ও জটিলতা বয়ে আনে। বিশ্বব্যাপী নারীদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ যক্ষ্মা। এই রোগ নারীদের স্বাস্থ্যনিরাপত্তার জন্য এক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা তাদের প্রজনন বছরগুলোতে এই রোগের ঝুঁকিতে বেশি থাকে।
গর্ভকালে যক্ষ্মা
যক্ষ্মা নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য এবং তাদের গর্ভের সন্তানদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থায় যক্ষ্মা হলে শিশুর অপরিণত জন্ম এবং কম ওজন নিয়ে জন্মের ঝুঁকি দ্বিগুণ এবং প্রসবকালীন মৃত্যুর ঝুঁকি ছয় গুণ বেড়ে যায়। অন্তঃসত্ত্বা নারীর যক্ষ্মা হলে গর্ভকালে, প্রসবের সময় বা জন্মের পরে শিশুর মধ্যে টিবি–সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই রোগের সঙ্গে যদি এইচআইভি যুক্ত হয়, তাহলে মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায় অনেক গুণ। তাই প্রসবপূর্ব ক্লিনিকগুলোতে লক্ষণ দেখা দিলে গর্ভবতী নারীদের যক্ষ্মার জন্য স্ক্রিনিং এবং চিকিৎসা সহজলভ্য করা প্রয়োজন।
বন্ধ্যত্বেরও কারণ হতে পারে যক্ষ্মা
নারীর প্রজনন অঙ্গকে আক্রান্ত করতে পারে যক্ষ্মা। বিশেষ করে ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বনালি আক্রান্ত হলে বন্ধ্যত্বের শিকার হতে পারে রোগী। বাংলাদেশে জেনিটাল টিবি বন্ধ্যত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি নির্ণয় করা অনেক সময় খুব দুষ্কর। কারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে সহজে এটা ধরা পড়ে না। যৌনাঙ্গের টিবিতে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়, তা হলো অনিয়মিত মাসিক, যেমন দীর্ঘস্থায়ী চক্র, মাসিকের হ্রাস–বৃদ্ধি, অনুপস্থিতি বা বেদনাদায়ক মাসিক প্রবাহ; পেলভিক ব্যথা এবং অস্বাভাবিক যোনিস্রাব। মেনোপজাল নারীদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো হতে পারে মেনোপজ–পরবর্তী রক্তপাত, ক্রমাগত যোনিস্রাব বা কখনো কখনো জরায়ু গহ্বরে পুঁজ জমা হওয়া।
যক্ষ্মার ওষুধ এবং গর্ভনিরোধক
রিফামপিসিন যক্ষ্মা চিকিৎসার একটি অন্যতম উপাদান। ওষুধটি গর্ভনিরোধক বড়ি এবং অন্যান্য হরমোন–পদ্ধতি যেমন ইমপ্ল্যান্ট, ইনজেকশন এবং জরুরি গর্ভনিরোধকগুলোর কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে। তাই যেসব নারী যক্ষ্মার চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁরা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে গর্ভনিরোধে পিল বা হরমোন ব্যতীত অন্যান্য পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
অন্তঃসত্ত্বা এবং দুগ্ধদান সময়ে টিবির ওষুধ কি নিরাপদ
অন্তঃসত্ত্বা বা স্তন্যদানকারী মায়েরা যক্ষ্মার ওষুধ খেলে সন্তানের কি ক্ষতি হতে পারে? চিকিৎসা না নিলে যক্ষ্মায় আক্রান্ত নারীদের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুর ওজন কম হতে পারে, এমনকি শিশুটি টিবি নিয়ে জন্ম নিতে পারে। যদিও যক্ষ্মা রোগের প্রাথমিক চিকিৎসাপদ্ধতিতে ব্যবহৃত ওষুধগুলো প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল অতিক্রম করে, তবে সেগুলো ভ্রূণের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে বলে মনে করা হয় না।
প্রথম সারির টিবির ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলাকালে মায়েরা বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। কারণ, বুকের দুধে এই ওষুধগুলোর ঘনত্ব খুব কম থাকে যা নবজাতকের মধ্যে খারাপ প্রভাব তৈরি করার আশঙ্কা নেই।
লেখক: মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, পপুলার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা