নবজাতকের শরীরে দেখা দেওয়া খিঁচুনির ৫০ শতাংশই সূক্ষ্ম খিঁচুনি। তাই প্রসব ও প্রসবের আগের ইতিহাস ও শারীরিক লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করতে হবে।
কখনো গরম, কখনো শীত; তাপমাত্রা ওঠানামা করছে—এমন পরিবেশে নবজাতকের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। এ সময় নবজাতকের খিঁচুনি হতে পারে। অনেক সময় সাধারণ কাঁপুনিকে খিঁচুনি বলে ভুল হয়। তাই এ বিষয়ে জানা ও সচেতন হওয়া জরুরি।
জন্মের পরপরই নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। জন্মের ৪ থেকে ৮ ঘণ্টা পর সে আগের তাপমাত্রায় ফিরে আসে। প্রসব রুমের তাপমাত্রা বেশি শীতল হলে কোল্ড ইনজুরি থেকে কাঁপুনি হতে পারে, যা ভুলবশত খিঁচুনি বলে মনে হয়। তাই প্রসব রুমের তাপমাত্রা তুলনামূলক উষ্ণ রাখতে হবে।
নবজাতকের বেশ কয়েকটি রোগ যেমন অক্সিজেন-স্বল্পতায় ভোগা, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, মস্তিষ্কের ইনফেকশন, রক্তের সুগার কমে যাওয়া ইত্যাদির অন্যতম লক্ষণ খিঁচুনি। এ ছাড়া অপরিপক্ব নবজাতকের ঠোঁট নাড়িয়ে শব্দ করা, অতিরিক্ত ক্ষুধার্ত হলে বা রক্তের ক্যালসিয়াম কম হলে হাত-পা কিংবা পুরো শরীরে সাধারণ কাঁপুনি হতে পারে। এ দুইয়ের তফাত বুঝতে হবে।
চার ধরনের খিঁচুনি
বড়দের আর নবজাতকের খিঁচুনিতে তফাত আছে। নবজাতক বিশেষত সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র কিছুটা অপরিপক্ব থাকায় খিঁচুনির লক্ষণ পুরোপুরি প্রকাশিত হয় না। নবজাতকের চার ধরনের খিঁচুনি দেখা যায়: শাটল সিজার বা সূক্ষ্ম খিঁচুনি, ক্লনিক সিজার, টনিক সিজার ও মায়োক্লোনিক সিজার।
নবজাতকের শরীরে দেখা দেওয়া খিঁচুনির ৫০ শতাংশই সূক্ষ্ম খিঁচুনি। সাধারণত মা-বাবার পক্ষে এটা নিরূপণ করা বেশ কঠিন। তাই প্রসব ও প্রসবের আগের ইতিহাস ও শারীরিক লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করতে হবে।
খিঁচুনি ছাড়াও নবজাতকের শরীরে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন ঝিমিয়ে পড়া, বুকের দুধ খেতে অনীহা, হঠাৎ ত্বক শীতল হয়ে যাওয়া, জ্বর, শ্বাসের গতি বেশি হওয়া, বুক দ্রুত ওঠানামা করা, গলায় ঘড়ঘড় শব্দ করা প্রভৃতি। এর মধ্যে এক বা একাধিক লক্ষণ থাকলে বুঝতে হবে নবজাতক গুরুতর সমস্যায় ভুগছে। এ সময় নবজাতককে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
খিঁচুনি হলে চিকিৎসকের কাছে কিংবা হাসপাতালে নেওয়ার আগে বাড়িতে নবজাতককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। এ সময়—
নবজাতককে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে।
বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
হাসপাতালে নেওয়ায় সময় নবজাতককে উষ্ণ রাখতে হবে।
কয়েক স্তরের সুতির কাপড় পরিয়ে নবজাতককে উষ্ণ রাখা যেতে পারে।
ডা. সুদেশ চন্দ্র রক্ষিত, সাবেক শিশু বিশেষজ্ঞ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ