দেখুন, যোগের তিন আসন

পদাঙ্গুষ্ঠাসন
পদাঙ্গুষ্ঠাসন

আমরা প্রতিদিন অনেক কাজ করে থাকি। নিজের শরীর, মন ও আত্মার প্রশান্তির জন্য কিছু করি না। এর জন্য ইয়োগা বা যোগব্যায়াম করতে পারেন। যোগব্যায়ামের জন্য সকাল খুব ভালো একটা সময়, ব্যস্ত থাকলে সন্ধ্যাতেও করতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখতে হবে পেট যেন ফাঁকা থাকে। এখানে যোগব্যায়ামের সহজ তিনটি আসন তুলে ধরা হলো, যা প্রতিদিন করতে পারবেন।

তাদাসন
 প্রথমে দুই পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
 দুই পায়ের পাতা একসঙ্গে অথবা ২ সেন্টিমিটার ফাঁকা করে দাঁড়াতে হবে।
 খেয়াল করতে হবে যেন শরীরের সমস্ত ভর দুই পায়ের পাতার ওপর সমান ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
 এবার দুই হাত ধীরে ধীরে মাথার ওপর ওঠাতে হবে এবং আঙুলগুলো একত্রে লক করতে হবে।
 নিশ্বাস নিতে নিতে হাত, বাহু, কাঁধসহ শরীরের ওপরের অংশ মাথার ওপরের দিকে স্ট্রেচ করতে হবে এবং ধীরে ধীরে পায়ের গোড়ালি ওপরে উঠিয়ে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে যতটা সম্ভব সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে।
 এভাবে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে যতক্ষণ নিশ্বাস ধরে রাখা সম্ভব ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
 মনে মনে চিন্তা করি, ওপর থেকে আমাকে কেউ টেনে লম্বা করে দিচ্ছে।
 এরপর প্রশ্বাস ফেলতে ফেলতে ধীরে ধীরে পায়ের গোড়ালি নিচে নামাতে হবে এবং হাত দুটোও লক করা অবস্থায় মাথার ওপরে নামিয়ে রাখতে হবে।
 কিছুক্ষণ রিলাক্স করে পুনরায় একইভাবে ৫ থেকে ৭ বার আসনটি অনুশীলন করতে হবে।
 খেয়াল রাখতে হবে পুরো সময় চোখ মাথার লেভেল থেকে কিছুটা ওপরে একটি বিন্দুতে স্থির রাখতে হবে।

উপকারিতা
এই আসন শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। হজমশক্তিকে উন্নত করতে সহায়তা করে এবং শরীরে জমে থাকা টক্সিন দূর করতে এই আসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ২ গ্লাস পানি পান করে এই আসন অনুশীলন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

তাদাসন

পদাঙ্গুষ্ঠাসন
 প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে যেন দুই পায়ের মাঝে অন্তত ২ সেন্টিমিটার ফাঁকা থাকে।
 বুকভরে শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটো সামনের দিকে প্রসারিত করতে হবে।
 এবার ধীরে ধীরে হাত দুটো মাথার ওপরে নিয়ে এসে শরীরটাকে যতটা সম্ভব টানটান করে রাখতে হবে।
 এবার প্রশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শরীরের ওপরের অংশটি সামনের দিকে নোয়াতে হবে।
 দুই হাতের তর্জনী ও মধ্যমা দিয়ে দুই পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দুটি শক্ত করে ধরতে হবে।
 হাঁটু কোনোভাবেই ভাঁজ করা যাবে না।
 এই অবস্থায় চোখ থাকবে নাভির দিকে।
 শ্বাস-প্রশ্বাস থাকবে স্বাভাবিক।
 এভাবে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড থাকার পর আবার গভীরভাবে শ্বাস নিতে নিতে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠতে হবে।
 খেয়াল রাখতে হবে মাথা ও হাত যেন একসঙ্গে ওপরে উঠে আসে।
 এবার ধীরে ধীরে প্রশ্বাস ফেলতে ফেলতে হাত দুটো নামিয়ে নিতে হবে।
 কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে পুনরায় একইভাবে ৫ থেকে ৭ বার আসনটি অনুশীলন করতে হবে।

উপকারিতা
মেরুদণ্ডের হাড়কে নমনীয় করতে এই আসন অনেক সহায়তা করে। মেরুদণ্ডে ব্যথা থাকলে এই আসন অনুশীলন না করা ভালো। হজমশক্তি বাড়বে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে। এই আসন মেয়েদের মাসিকের সময় ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে এবং তলপেটের মেদ কমাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ধানুরাসন

ধানুরাসন
 ম্যাটের ওপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে হবে।
 পা দুটো হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে যত দূর সম্ভব পিঠের ওপর নিয়ে আসতে হবে।
 দুই হাত দিয়ে দুই পায়ের গোড়ালি শক্ত করে ধরতে হবে।
 পা যতটা সম্ভব মাথার দিকে টেনে আনতে হবে।
 হাত দিয়ে পা দুটো ওপরের দিকে তুলতে হবে।
 মাথা, বুক, হাঁটু, ঊরু ম্যাট থেকে ওপরে উঠে আসবে।
 চোখ থাকবে দুই ভ্রুর মাঝখানে।
 এই অবস্থায় শ্বাস–প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
 এভাবে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড থেকে পা দুটো ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে হবে।
 আবার আগের মতো উপুড় করে শুয়ে রিলাক্স করতে হবে।
 কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে পুনরায় একইভাবে ৫ থেকে ৭ বার আসনটি অনুশীলন করতে হবে।

উপকারিতা
এই আসন ইন্টারনাল অ্যাবডোমিনাল অর্গান যেমন পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, যকৃৎ কার্যকর করে। শরীরের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করতে এই আসন খুবই উপকারী। নারীদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এই আসন শরীরের মধ্যভাগের মেদ কমাতে সাহায্য করে। মনের চঞ্চলতা কমাতে এবং ধৈর্যশক্তি বাড়াতে সহায়ক।

সাবধানতা
যোগাসনের উপকারিতা এক দিনে পাওয়া যাবে না। নিয়মিত বুঝে ও জেনে প্রয়োজন অনুযায়ী আসনগুলো করলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম অনুশীলনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। পেটে অস্ত্রোপচার হলে যোগব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ই–মেইল: rumana.haque@bracu.ac.bd