দুধ কেবল একটি পানীয় নয়, এটি সুষম খাদ্য। কেননা এতে আমিষ, চর্বি, শর্করা ও নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ পর্যাপ্ত পরিমাণে মেলে। একটিমাত্র পানীয়ে এত ধরনের পুষ্টি উপাদান বোধ হয় আর পাওয়া যাবে না।
দুধের পুষ্টি: দুধে যে আমিষ আছে, তার নাম কেজিন। এই কেজিন ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যালসিয়াম কেজিনেট তৈরি করে। এই আমিষটি বেশ উৎকৃষ্ট মানের। সব ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে বলেই দুধকে আদর্শ আমিষ বলা হয়। এ ছাড়া দুধের প্রধান শর্করা হলো ল্যাকটোজ, সঙ্গে আছে স্বল্প পরিমাণে গ্লুকোজ। ল্যাকটোজের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে দুধের মিষ্টতা। গ্লুকোজের পরিমাণ কম বলে দুধ রক্তে শর্করা বেশি বাড়ায় না। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের খেতে বাধা নেই। কিছু পরিমাণ সম্পৃক্ত চর্বি আছে দুধে। ফসফোলিপিড ও ট্রাইগ্লিসারাইড গোত্রের অন্তর্গত এই চর্বি। এটি সহজেই হজম হয়। দুধের ওপর জমে থাকা সরে চর্বি বেশি—তাই চর্বি না খেতে চাইলে সর ফেলে দিতে হবে।
ভিটামিন ও খনিজ: দুধে ক্যারোটিন ও ভিটামিন ‘এ’-এর পরিমাণ নির্ভর করে গরুর খাদ্যের ওপর। যে গরু পর্যাপ্ত ঘাস খায়, তার দুধে ভিটামিন ‘এ’ তত বেশি। তরল দুধের তুলনায় মাখন ও ক্রিমে ভিটামিন ‘এ’ বেশি। দুধ ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস। সাধারণত এক কাপ দুধে প্রায় ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এক কাপ দইয়ে পাওয়া যাবে আরও একটু বেশি, প্রায় ৪৫০ মিলিগ্রাম। দুধে ‘এ’-র সঙ্গে ভিটামিন ‘ডি’ পর্যাপ্ত আছে বলে তা ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ১০০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার। ভিটামিন ‘ডি’ দরকার ৪০০ আইইউ। আমাদের হাড়ের মূল উপাদান দুটি—কোলাজেন নামের আমিষ আর ক্যালসিয়াম ফসফেট নামের খনিজ। এই দুটিই পাওয়া যাবে দুধে।
দুধ খেতে পারেন না?: কারও অন্ত্রে ল্যাকটোজ অ্যানজাইমের অভাব বা অকার্যকারিতা থাকলে তার দুধ পরিপাক হয় না। ফলে দুধ খেলেই বদহজম হয়। একে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বলা হয়। এরা ছাড়া অনেকের দুধ খেলে পেটে গ্যাস হতে বা পেট ফাঁপতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে দুধের সঙ্গে কোনো খাদ্যশস্য মিলিয়ে খাবেন। যেমন দুধ-রুটি, দুধ-ভাত, দুধ-মুড়ি, কর্নফ্লেক্স বা খই ইত্যাদি। যাদের ওজন বেশি বা রক্তে চর্বি বেশি, তাঁরা দুধের সর ফেলে বা নন ফ্যাট দুধ খেতে চেষ্টা করবেন। মাখন, নিন, পনির, ক্রিম বা খুব ঘন দুধ এড়িয়ে চলবেন। বারডেম হাসপাতাল|