বিশ্বে আশঙ্কাজনক হারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৮৫ লাখ। বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি। ডায়াবেটিস রোগীদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো তাদের পায়ের ক্ষত, যা ডায়াবেটিক ফুট নামে পরিচিত। সময়মতো শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা না করালে যা অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ডায়াবেটিক ফুট আসলে কী
ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ে সচরাচর ছোটখাটো ক্ষত হতে দেখা যায়, যা অনেক সময় আলসারে রূপ নেয়। এ ক্ষত পুরো পায়ে ছড়িয়ে গিয়ে রোগীর সেপসিস হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ছোটখাটো ক্ষত থেকে সেপসিস পর্যন্ত সব কটি অবস্থাই ডায়াবেটিক ফুটের অন্তর্গত।
কোথায় শুরু হয়
সাধারণত পায়ের প্রেশার পয়েন্টগুলোতে এটা বেশি হতে দেখা যায়। অর্থাৎ দাঁড়ানো অবস্থায় পায়ের যে অংশগুলোতে শরীরের চাপ বেশি পড়ে, সেখানে এটি বেশি হয়।
এটি ছড়িয়ে পড়তে কেমন সময় লাগে
কারও কারও ক্ষেত্রে খুব দ্রুত এ ক্ষত আলসারে রূপ নেয় ও সারা পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এটি ধীরে ধীরে ছড়ায়।
কীভাবে হয়
ডায়াবেটিক ফুট হওয়ার পেছনে তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে। এগুলো হলো রক্তনালির সমস্যা, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি আর সংক্রমণ। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যম ও ছোট রক্তনালিগুলোতে চর্বি বা প্লাক জমে নালি ক্রমশ সরু হতে থাকে। একই সঙ্গে রক্তনালির নমনীয়তা কমে যায়। এ কারণে রক্তসঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়। পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির দুটি অংশ—সেন্সরি আর মোটর। সেন্সরি সমস্যার জন্য রোগী পায়ের ছোটখাটো আঘাত সহজে টের পায় না। এ কারণে ক্ষতস্থান রোগীর অজান্তেই বড় হতে থাকে।
আর মোটর সমস্যার জন্য রোগীর গোড়ালি ও হাঁটুর জয়েন্টে ভারসাম্যহীনতা ঘটে। এতে এ দুই জয়েন্টে ভার বহনের ক্ষমতা কমে যায় ও ব্যথা বেড়ে যায়। তৃতীয় কারণ হলো রক্তে উচ্চ মাত্রার চিনি। এতে রোগজীবাণু সহজে বংশবিস্তার করতে পারে। একই সঙ্গে দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। তাই সামান্য আঘাতেই পায়ে সংক্রমণ হয়ে যায়, যা সহজে সারে না।
কাদের বেশি হয়
সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, মানে যাঁরা নিয়মিত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করেন না, যাঁরা বেশি ফাস্ট ফুড, সফট ড্রিংকস, অ্যালকোহল ও সিগারেটে আসক্ত, তাঁদের এটি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
চিকিৎসার ধরন
১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
২. ক্ষতস্থান নিয়মিত ড্রেসিং করাতে হবে বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. নতুন ক্ষত যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৪. যদি গ্যাংগ্রিন হয় বা পচে যায়, তাহলে সে অংশ দ্রুত অস্ত্রোপচার করাতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
পর্যাপ্ত ব্যায়াম ও হাঁটাচলা।
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা।
নরম সোলের জুতা পরা।
প্রতিদিন বেলা শেষে নিজের পায়ের পরিচর্যা করা।
লেখক: কনসালট্যান্ট সার্জন, ইবনে সিনা হাসপাতাল, সিলেট