জেনে নিন কোন খাবারে কী ভিটামিন

সুস্থ থাকতে সুষম খাবারের কোনো বিকল্প নেই। সুষম খাবারে আবার যথাযথ পরিমাণে খনিজ লবণ ও ভিটামিন থাকতে হবে। ভিটামিন ও খনিজ লবণের কাজ হলো বিপাকক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে শরীরে শক্তি উৎপন্ন করা। এ ছাড়া ত্বক, হাড়, দাঁত, চুল, চোখ, স্নায়ু, মস্তিষ্কসহ দেহের অভ্যন্তরীণ তরল পদার্থের সমতা বজায় রাখা। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে খনিজ লবণ ও ভিটামিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।

ভিটামিন–খনিজের চাহিদা পূরণে দোকান থেকে বড়ি কিনে খাওয়ার দরকার পড়ে না। আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে বৈচিত্র্যময় শাকসবজি ও ফলমূলের যে বিপুল সম্ভার, তা অনায়াসেই পূরণ করতে পারে খনিজ লবণ ও ভিটামিনের প্রাত্যহিক চাহিদা। শর্করা এবং সামান্য পরিমাণে প্রোটিন ছাড়াও শাকসবজি ও ফলমূলে অবস্থিত খাদ্য-আঁশ, খনিজ লবণ ও ভিটামিন (মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট) দেহের অপুষ্টিজনিত রোগ (অ্যানিমিয়া, রাতকানা ইত্যাদি), কিছু ক্যানসার, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।

মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের চাহিদা মেটাতে খাদ্যবৈচিত্র্য অনুসরণের মাধ্যমে দৈনিক দুই কাপ ফল ও আড়াই কাপ শাকসবজি গ্রহণ করা উচিত। তবে আড়াই কাপ শাকসবজির মধ্যে অন্তত এক কাপ শাক এবং দুই কাপ ফলের মধ্যে অন্তত আধা কাপ সাইট্রাসজাতীয় ফল (লেবু, জাম্বুরা, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্ত করা ভালো।

শাকসবজি ও ফলমূলে রয়েছে দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ বা বিটা ক্যারোটিন, সি, ই ও বি ভিটামিনগুলো এবং ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক, কপার ইত্যাদি খনিজ লবণ।

এখন জেনে নেওয়া যাক, পরিচিত শাকসবজি ও ফলমূলে ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি কী পরিমাণে পাওয়া যেতে পারে।

শাক

লালশাক : প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন ১০,১০০ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৮৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ৫ দশমিক ৩ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৪৩ মিলিগ্রাম।

ডাঁটাশাক : প্রতি ১০০ গ্রাম ডাঁটাশাকে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন—৯ হাজার ৪৬০ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৯২ মিলিগ্রাম, আয়রন ৭ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৮৩ মিলিগ্রাম।

লাউশাক : প্রতি ১০০ গ্রাম লাউশাকে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ২ হাজার ৩৭০ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯৪ মিলিগ্রাম, আয়রন ৫ দশমিক ২ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৪৮ মিলিগ্রাম।

পুঁইশাক : প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁইশাকে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ২ হাজার ৪১০ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১১১ মিলিগ্রাম, আয়রন ২ দশমিক ২ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৬৪ মিলিগ্রাম।

শজনেশাক: প্রতি ১০০ গ্রাম শজনেশাকে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে ১৩ হাজার ১৬০ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৪০ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ২২০ মিলিগ্রাম।

পালংশাক: প্রতি ১০০ গ্রাম পালংশাকে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ৮ হাজার ৬০ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩ দশমিক ১ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩০ মিলিগ্রাম।

পাটশাক : প্রতি ১০০ গ্রাম পাটশাকে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ৩ হাজার ৬৬০ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১২০ মিলিগ্রাম, আয়রন ৯ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৫৪ মিলিগ্রাম।

সবজি

গাজর : প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে রয়েছে ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম; এতে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায়—৬ হাজার ৯৬০ মাইক্রোগ্রাম।

টমেটো : প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা টমেটোতে ৩১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ১৯২ মাইক্রোগ্রাম বিটা ক্যারোটিন এবং পাকা টমেটোতে ১৪ দশমিক ১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ১৮৭ মাইক্রোগ্রাম বিটা ক্যারোটিন রয়েছে।

বরবটি : প্রতি ১০০ গ্রাম বরবটিতে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম ৫৪ মিলিগ্রাম ও বিটা ক্যারোটিন ১০১ মাইক্রোগ্রাম।

মটরশুঁটি : প্রতি ১০০ গ্রাম মটরশুঁটিতে বিটা ক্যারোটিন ৪৫৫ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৩ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৭ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম রয়েছে।

ঢ্যাঁড়স : প্রতি ১০০ গ্রাম ঢ্যাঁড়সে রয়েছে ক্যালসিয়াম ৭২ মিলিগ্রাম, আয়রন শূন্য দশমিক ৭ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ১৭৭ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ১৮ মিলিগ্রাম।

বেগুন : প্রতি ১০০ গ্রাম বেগুনে রয়েছে ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম, আয়রন শূন্য দশমিক ৪ মিলিগ্রাম ও বিটা ক্যারোটিন ৪৫ মাইক্রোগ্রাম।

শিম : প্রতি ১০০ গ্রাম শিমে রয়েছে ক্যালসিয়াম ৭০ মিলিগ্রাম, আয়রন শূন্য দশমিক ৯ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ২২৭ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৯ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম।

লাউ : প্রতি ১০০ গ্রাম লাউয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম ২৬ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৮ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম।

মিষ্টিকুমড়া: প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টিকুমড়া রয়েছে ক্যালসিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ দশমিক ১ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৬ হাজার ৬৪০ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ২৬ মিলিগ্রাম।

কাঁচকলা : প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচকলাতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ২২ মিলিগ্রাম, আয়রন শূন্য দশমিক ৬ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৬৩৬ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৪ দশমিক ৩ মিলিগ্রাম।

পটোল : প্রতি ১০০ গ্রাম পটোলে রয়েছে ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৭০ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ১৯ মিলিগ্রাম।

ফুলকপি : প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ৩৬ মিলিগ্রাম, আয়রন শূন্য দশমিক ৮ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৪৬ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম।

বাঁধাকপি : প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ৩৫ মিলিগ্রাম, আয়রন শূন্য দশমিক ৫ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৬০ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ১৬ মিলিগ্রাম।

ডাঁটা : প্রতি ১০০ গ্রাম ডাঁটায় রয়েছে ক্যালসিয়াম ১৪০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৩০৬ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩৬ মিলিগ্রাম।

করলা : প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় রয়েছে ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৩১১ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৯১ মিলিগ্রাম।

ফল থাক প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়

ফল

পাকা পেঁপে: প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৭২১ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৬২ মিলিগ্রাম।

পাকা কলা: প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কলাতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম, আয়রন শূন্য দশমিক ৯ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৬ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম।

পেয়ারা : প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম, আয়রন শূন্য দশমিক ৭ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৩৯০ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ২২৮ মিলিগ্রাম।

আমড়া : প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় রয়েছে ক্যালসিয়াম ৫৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ২ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৯২ মিলিগ্রাম।

আমলকী : প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকীতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ৩২ মিলিগ্রাম, আয়রন শূন্য দশমিক ৯ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৪৬৩ মিলিগ্রাম।

জাম্বুরা : প্রতি ১০০ গ্রাম জাম্বুরায় রয়েছে ক্যালসিয়াম ৩৬ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ১০৫ মিলিগ্রাম।

আনারস : প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে রয়েছে ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, আয়রন শূন্য দশমিক ৭ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৬১ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩৪ মিলিগ্রাম।

লেবু : প্রতি ১০০ গ্রাম লেবুতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ৬৫ মিলিগ্রাম, বিটা ক্যারোটিন ৪৫ মাইক্রোগ্রাম ও ভিটামিন সি ৬৩ মিলিগ্রাম।

  • সবজির সালাদ ও তাজা ফল কাঁচা অবস্থায় সরাসরি খেলে সবটুকু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টই অবিকৃত অবস্থায় গ্রহণ করা যায়।

  • শাকসবজি ভাপ দিয়ে, প্রেশার কুকারে অথবা ঢাকনা দিয়ে অল্প সময়ে অল্প তাপে রান্না করে খেলে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া সম্ভব।

  • রান্নায় সামান্য তেল ব্যবহারে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলো (এ, ডি, ই, কে) সহজে দেহে শোষিত হয়।

লেখক: পুষ্টিবিদ ও শিক্ষক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর