বসন্ত আর গ্রীষ্মের শুরুতে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় শরীরে বাসা বাঁধে বিভিন্ন ভাইরাস। এর মধ্যে জলবসন্ত বা চিকেনপক্স উল্লেখযোগ্য। জলবসন্ত নিয়ে অনেকের মধ্যেই ভ্রান্ত সব ধারণা আছে! সেসবে কান না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
নিয়মিত গোসল করা জরুরি। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানিতে গোসল করবেন না।
নিমপাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে বেশি উপকার মিলবে। নিমের অ্যান্টিসেপটিক উপাদান পক্স নির্মূল করতে সাহায্য করে।
জ্বর হলে প্রাপ্ত বয়স্করা প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে ছোটদের ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চুলকানি ও ব্যথা থেকে নিস্তার পেতে শিশুর শরীর ঠান্ডা পানিতে মুছে দিন, এতে ত্বকে খানিকটা হলেও আরাম মিলবে।
প্রতিদিন দুই বেলা করে জামাকাপড় বদলানো উচিত। তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
সুতি ছাড়া অন্য কাপড়ের পোশাক পরবেন না, তাতে চুলকানি বা অস্বস্তি বেড়ে যেতে পারে।
চুলকানি হলে কখনো নখ লাগাবেন না। এ থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই শিশুদের পক্স হলে তাদের নখ ছোট করে কেটে দিন।
চুলকানি কমাতে অলিভ অয়েল বা ক্যালামাইন লোশন লাগালে আরাম পাবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক–জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে এবং পক্সের ওপর অ্যান্টিবায়োটিক মলমও লাগাতে পারেন।
চর্বিজাতীয় খাবার যেমন মাখন, তেল, বাদাম, পনির, নারকেল বা চকলেট–জাতীয় খাবারে অতিরিক্ত ফ্যাট থাকে, যা পক্সের প্রদাহ বাড়িয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাবেন না। আর জলবসন্ত হলে মুখে বা জিবেও ক্ষত সৃষ্টি হয়, এতে ঝাল লাগলেই প্রদাহ বেড়ে যাবে। তাই ঠান্ডা ও সহজপাচ্য খাবার ভাল।
আখরোট, চিনাবাদাম, কিশমিশের মতো খাবার অর্গিনিন নামের একধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা জলবসন্তের জীবাণুর বংশবিস্তার করে। এমনিতে এই অ্যাসিড শরীরের পক্ষে ভালো হলেও জলবসন্তের সময় তা একেবারেই খাবেন না।
রোগীকে বেশি ক্যালরি, ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। তবে মুখে স্বাদ আনতে পাতলা স্যুপও খাওয়াতে পারেন।
ইলিশ-চিংড়ি–জাতীয় মাছ ছাড়া যেকোনো মাছের পাতলা ঝোল আর ভাত দেওয়া যায়। ডাল খাওয়া খুবই উপকারী। বিশেষ করে ডালের পানি যদি চুমুক দিয়ে খাওয়ানো যায়, তাহলে শরীর খুব ঠান্ডা থাকে।
ফলের রস খাওয়াতে পারেন, এটি শরীরে পুষ্টি জোগাবে। তবে লেবুর রস খাওয়া যাবে না। কারণ, এতে থাকে উচ্চমাত্রায় সাইট্রিক অ্যাসিড, যা মুখের ভেতরে ক্ষতস্থানে জ্বালাযন্ত্রণার কারণ হতে পারে। ত্বকে ছত্রাক বা যেকোনো সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে মলম ও ওষুধ ব্যবহার করুন।
ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা