অস্ত্রোপচার বা শল্যচিকিৎসা মানেই যেন ভীতির ব্যাপার। অস্ত্রোপচার করার কথা শুনলেই ঘাবড়ে যান সবাই। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে নানা দুর্ঘটনা বা কিছু সমস্যায় প্রায়ই ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। অনেকে আবার এগুলো তেমন পাত্তা দেন না। নিজে ঘরে বসেই টোটকা চিকিৎসা করতে বা নিজে নিজে কাটার চেষ্টা করেন। কেউ অচিকিৎসকের কাছে যান। কিন্তু এ নিয়ে অবহেলা করলে সংক্রমণসহ নানা বিপদ হতে পারে।
সময়মতো অস্ত্রোপচার না করানোর ফলে সাধারণ কোনো কোনো সমস্যা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। ফোড়া, কারবাঙ্কল বা দুষ্ট ব্রণ, নখ ভেতরে দেবে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা এমনই কিছু বিষয়।
সাধারণ এসব সমস্যার অস্ত্রোপচার নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। এ ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য ভর্তি হয়ে হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন পড়ে না। রোগীকে পুরো অজ্ঞান করারও প্রয়োজন হয় না। স্বাভাবিক কাজে ফিরে যেতে খুব বেশি সময়ও লাগে না। কিন্তু অযথা দেরি করলে বা অপটু হাতে কাটার চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
শরীরের ত্বকে কোনো কিছুর খোঁচা বা আঘাত লাগার কারণে সেখানে জীবাণুর সংক্রমণ হয়ে লাল হয়ে ফুলে গেলে তাকে ফোড়া বলা যায়। মাটিতে খালি পায়ে হাঁটা, খালি হাতে যন্ত্রপাতি নাড়াচাড়ার সময় এমন আঘাতের আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় কীভাবে এটা হলো, তা টেরও পাওয়া যায় না। ডায়াবেটিস রোগী বা অন্য কোনো কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গিয়েছে, এমন রোগীর ক্ষেত্রে শরীরের এক স্থানে হওয়া জীবাণুর সংক্রমণ রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে গিয়ে অন্য স্থানে ফোড়ার সৃষ্টি হতে পারে।
ফোড়ায় পুঁজ হলে অবশ্যই তা বের করার জন্য অস্ত্রোপচার করতে হবে, শুধু অ্যান্টিবায়োটিকে কাজ হবে না; বরং দেরি হলে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করার আশঙ্কা থাকে।
তবে পুঁজ না জমে থাকলে শুধু অ্যান্টিবায়োটিকেও কাজ হতে পারে। যেটাই লাগুক, ফোড়া হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। ডায়াবেটিস বা অন্যান্য জটিল রোগ থাকলে মোটেও দেরি করবেন না। বারবার ফোড়া হওয়া কিন্তু ডায়াবেটিসের একটি লক্ষণ হতে পারে।
এটি ফোড়ার মতোই। তবে ফোড়ার যেমন একটি ‘মুখ’ (পুঁজ জমা ক্ষুদ্র স্থান) থাকে, কারবাঙ্কলের ক্ষেত্রে তা থাকে অনেক। সাধারণত ঘাড়ে ও পিঠে হয় এটি। বয়স্ক কিংবা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া ব্যক্তির (অপুষ্টি, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো কারণে) এ রকম হতে পারে। কারবাঙ্কল হলে অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি নেই।
ত্বকের ঘর্মগ্রন্থির নিঃসরণ জমা হয়ে ওই স্থান ফুলে যেতে পারে। একে বলা হয় সিবেশিয়াস সিস্ট। এই সিস্টে জীবাণুর সংক্রমণ হয়ে ফোড়া হয়ে যেতে পারে। সিস্টে জীবাণুর সংক্রমণ হলে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করতে হবে, পরবর্তী সময়ে আবার পুরো সিস্টের জন্য অস্ত্রোপচার লাগতে পারে। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে বলে সিস্ট হলে শুরুতেই সেটির অস্ত্রোপচার করিয়ে নেওয়া উচিত।
নখ কাটার নিয়ম মেনে নখ না কাটলে (বেশি গভীরভাবে নখ কেটে ফেললে), খুব আঁটসাঁট জুতা পরলে কিংবা পা অপরিষ্কার থাকলে পায়ের নখের একটা দিক সামনের দিকে বাড়ার পরিবর্তে ভেতরের দিকে বাড়তে পারে। মানে নখ দেবে যায়। তখন আঙুলের ভেতরের অংশে চাপ সৃষ্টি হয়। এতে ব্যথা হতে পারে, আঙুলের একদিক ফুলে যেতে পারে, লাল হয়ে যেতে পারে। এ রকম হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নখটা আংশিক বা পুরোপুরি উঠিয়ে ফেলতে হয়।
কখনোই নিজে নিজে বাড়িতে ফোড়া কাটা, নখের কুনি সার্জারি, পায়ের কড়া ওঠানোর মতো কাজ করতে যাবেন না। বড় সার্জারির মতো ছোট সার্জারিতেও একই ধরনের সাবধানতা, হাইজিন, বিশুদ্ধ যন্ত্রপাতির দরকার হয়। নয়তো সংক্রমণ বেড়ে যাবে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া ও অপরিচ্ছন্ন থাকা এসবের অন্যতম কারণ। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খাবেন।
রক্তের শর্করা সুনিয়ন্ত্রণে রাখুন। ডায়াবেটিস থাকলে ত্বক বা যেকোনো জায়গায় রং পরিবর্তন, পুঁজ, ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। সামান্য সংক্রমণ অবহেলায় সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে সেপটিসেমিয়া হয়ে যেতে পারে।
দৈনন্দিন জীবনে সাবধানতা অবলম্বন করুন। জুতা ছাড়া বাইরে যাবেন না। নরম সোলের জুতা পরবেন। নখ কাটবেন সাবধানে, বেশি গভীর করে নয়। নখ দিয়ে টিনের মুখ বা ধারালো জিনিস খুলতে যাবেন না। আঙুলে কাঁটা ফুটলে বা কাজ করার সময় ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অনুলিখন: ডা. রাফিয়া আলম