একটি মৌসুমি ফল সারা বছর পাওয়া যায় না। তবে সারা বছর কিছু না কিছু মৌসুমি ফল পাওয়া যায়। কেবল একটি নির্দিষ্ট সময় বা মৌসুমে পাওয়া যায় বলেই তাদের নাম দেওয়া হয়েছে মৌসুমি ফল। এই ফলগুলোতে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যেমন আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, বাঙ্গি, জামরুল ইত্যাদি গ্রীষ্ম মৌসুমের ফল। বিদেশি দামি ফল না কিনে আমাদের সহজলভ্য দেশি ফল খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সম্ভব হলে আমাদের বাড়ির আশপাশে বা ছাদে যদি দু–একটি মৌসুমি ফলের গাছ লাগিয়ে ফেলুন। আপাতত জেনে নেওয়া যাক কিছু মৌসুমি ফলের কথা
রসাল পাকা আম সবার পছন্দ
গ্রীষ্মকালীন ফলগুলোর মধ্যে আম অন্যতম। গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও বর্ষাকাল পর্যন্ত চলে এর মৌসুম। আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। রসাল পাকা আম সবারই খুব পছন্দ। আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। ভিটামিন-এ , ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি৬, পটাশিয়াম, কপার, আয়রন, অ্যামিনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন ও বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
আম থেকে প্রচুর ক্যালরি পাওয়া যায়। তাই এটি ক্ষুধা কমাতে এবং শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। পাকা আম আমাদের ত্বক সুন্দর, উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখে। ব্রণের সমস্যা কমায়। পাকা আমে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আমে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, তা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এভাবে সুস্থ-সবল রাখে। পাকা আমে বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন ই থাকে। এগুলো হৃৎপিণ্ডের সুস্থতা বজায় রাখে। আমে ভিটামিন এ থাকে, এই ভিটামিন দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
আমে পটাশিয়াম পাওয়া যায়। পটাশিয়াম হৃৎস্পন্দন ঠিক রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আমে থাকা টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অনেক রোগ প্রতিরোধ করে। পাকা আমে রয়েছে প্রচুর ট্রিপটোফ্যান; যা নিদ্রাকোষী রাসায়নিক হিসেবে কাজ করে। তাই আম খেলে ঘুম ভালো হয়।
তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি আর যাঁরা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছেন তাঁরা দিনে একটির বেশি পাকা আম খাবেন না।
জাম, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নিশ্চিন্তে খান
গ্রীষ্মকালীন ফলগুলোর মধ্যে জাম অন্যতম। আমের তুলনায় জাম খুব অল্প সময় বাজারে পাওয়া যায়। অনেকেই জাম খেতে খুব পছন্দ করেন। জামে রয়েছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি, ফাইবারসহ নানা পুষ্টি উপাদান।
জাম ও জামের বিচির অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে, এটা আমরা সবাই জানি। জাম সিজনাল জ্বর, ঠান্ডা-কাশি উপশমে সাহায্য করে। জাম ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। জামে ভিটামিন এ থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। জাম কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। জামের মধ্যে থাকা ফাইটোকেমিক্যালস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। জামে আয়রন থাকে। তাই এটি রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।
দাঁত ও হাড়ের বন্ধু লিচু
রসে টসটসে লিচু ছোট-বড় সবারই খুব পছন্দ। জামের মতো লিচুও বাজারে খুব অল্প সময় থাকে। লিচু ভিটামিন-সি ও ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস। এ ছাড়া লিচুতে অল্প পরিমাণে আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড ও ফাইবার থাকে।
* লিচুতে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম থাকায় এটি দাঁত ও হাড়ের জন্য বেশ উপকারী। লিচুতে পটাশিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লিচুতে ফ্যাট নেই বললেই চলে। তাই এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। লিচু থেকে ফাইবার পাওয়া যায়। তাই এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। লিচুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বকের জন্য উপকারী এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
* লিচুতে হাইপো গ্লাইসিন থাকে, যা রক্তে সুগারের মাত্রা কমিয়ে দেয়। তাই খালি পেটে শিশু এবং ডায়াবেটিক রোগীদের লিচু খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
* লিচু বেশি খেলে শরীর ও পেট গরম হয়ে যেতে পারে।
সব রকম পুষ্টি আছে কাঁঠালে
কাঁঠাল অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল। আমাদের শরীরের জন্য যত ধরনের পুষ্টি উপাদান দরকার, তার প্রায় সমস্তই কাঁঠালে আছে। আমের মতো কাঁঠালও বাজারে বেশ ভালো সময় ধরেই পাওয়া যায়। কাঁঠাল ও কাঁঠালের বিচি দুটোই আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। কাঁঠালে গ্লুকোজ, সুক্রোজ, ফ্রুকটোজ, ভিটামিন এ, সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, বিটা ক্যারোটিনসহ আরও বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস থাকে।
* পাকা কাঁঠালে গ্লুকোজ, সুক্রোজ ও ফ্রুকটোজ থাকে, যা দ্রুত রক্তে মিশে এনার্জি দেয়।
* কাঁঠালে ভিটামিন এ থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় ও রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কাঁঠালে ফ্যাট ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম। তাই এটি রক্তে চর্বির পরিমাণ বাড়ায় না। এই ফলে ভিটামিন সি ও বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
* কাঁঠালে বিটা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা হাড়, দাঁত ও ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে। কাঁঠালের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে। কাঁঠাল থেকে আয়রন পাওয়া যায়; যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ২০০ গ্রাম পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুর কোনো পুষ্টির অভাব হয় না।
তবে ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত কাঁঠাল না খাওয়াই ভালো।
লেখক: পুষ্টিবিদ, লেকসিটি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, খিলক্ষেত, ঢাকা।