সামনে ঝুঁকে বা কাত হয়ে ভারী কিছু তোলা, দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে কাজ করলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
অনেক কারণেই ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। সারভিক্যাল স্পনডাইলোসিস, সারভিক্যাল স্পনডাইলোলিসথেসিস, সারভিক্যাল রিবস, সারভিক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হলে এই ব্যথা হয়। এ ছাড়া সারভিক্যাল ডিস্ক প্রলেপস বা হারনিয়েশন ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। অস্বাভাবিক পজিশনে শুয়ে থাকা, সামনে ঝুঁকে বা একপাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তোলা, দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে কাজ করলে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
এই ব্যথার উপসর্গ হতে পারে একেক রকম, যা কাঁধ, বাহু এমনকি আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অবশ ভাব এবং ঘাড় ধরে আছে, এমন অনুভূতি হতে পারে। অনেক সময় ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর কিংবা হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়। ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসতে পারে।
ঘাড়ে ব্যথার চিকিৎসার আগে এর কারণ নির্ণয়ের জন্য রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, এক্স-রে, এমআরআই, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি দরকার হতে পারে।
চিকিৎসা
ঘাড়ে ব্যথার চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো, ১. ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ নিরাময় করা। ২. ঘাড়ের মুভমেন্ট স্বাভাবিক করা। ব্যথার কারণ অনুসন্ধানের পর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক থেরাপিউটিক যন্ত্র, যেমন ইন্টারফেরেনসিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথার্মি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট স্যারভাইক্যাল ট্র্যাকশন, ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ইত্যাদি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।
কনজারভেটিভ বা মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রতিকারের উপায়
১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না
২. বেশি ওজন বহন করবেন না
৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে
৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন
৫. ঘুমানোর সময় মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে থাকবে
৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো বন্ধ করা
৭. অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বন্ধ করা
৮. সেলুনে কখনোই ঘাড় ম্যাসাজ নয়
৯. কাত হয়ে শুয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না
১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন
১১. গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে সেঁক দিতে পারেন
১২. ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।
আগামীকাল পড়ুন: তীব্র গরমে ডায়রিয়া, দরকার সচেতনতা