গ্রীষ্মকালীন ফলের উপকারিতা

গ্রীষ্মকালীন ফলগুলো যেমন উপাদেয়, তেমনি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। আসুন জেনে নিই বিভিন্ন ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।

আম: মিষ্টি এ ফলের ১০০ গ্রামে ৪০০ ইউনিট ভিটামিন এ, ১২ গ্রাম শর্করা, ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। পাকা আমের ৬০ শতাংশের বেশি ক্যারোটিন, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে মজবুত করে। কাঁচা আমে থাকা ফাইবার পিকটিন কোলেস্টেরলসহ হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে। আমে থাকে প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।

আমে থাকা সোডিয়াম দেহের পানির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমের মেলিক ও টারটারিক অ্যাসিড দেহের অ্যালকালিন লেভেল ঠিক রাখে।

কাঁঠাল: এই ফল রুচি ও শক্তিবর্ধক। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ৯.৯ গ্রাম শর্করা, ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। কাঁচা কাঁঠাল তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। এর দানা ভেজে কিংবা রান্না করে খাওয়া যায়।

লিচু: দেহের পানির চাহিদা ও পিপাসা মেটাতে খুবই কার্যকর। ১০০ গ্রাম লিচুতে ১৩.৬ গ্রাম শর্করা থাকে। ক্যালসিয়াম আছে ১০ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম। লিচু দিয়ে জ্যাম তৈরি করেও সংরক্ষণ করা যায়।

তরমুজ: প্রায় ৯০% পানি থাকায় ক্লান্তি দূর করতে তরমুজের জুড়ি নেই। ১ কাপ তরমুজে ১১ গ্রাম শর্করা থাকে, যার ৯ গ্রামই চিনি। তরমুজে ভিটামিন এ, বি ও সি অনেক বেশি থাকে। ভিটামিন সি ঋতুজনিত সর্দি, টনসিল, গরম-ঠান্ডা–জ্বর ও নাক দিয়ে পানি পড়া কমায়। তরমুজের লাইকোপিন ও সিট্রুলিন হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

জাম: প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন সি আছে এই ফলে। রক্তস্বল্পতা দূর করে। এতে শর্করা খুব কম। তাই ডায়াবেটিস রোগী নিশ্চিন্তে জাম খেতে পারেন। জামের বিচি রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। জাম দেহের যেকোনো সংক্রমণ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

তাল: ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের আধার। তালের আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগে বেশ উপকারী। তাল দিয়ে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার যেমন তালের ক্বাথ, জুস, বড়া, কেক, পিঠা ইত্যাদি তৈরি করে খাওয়া যায়।

বেল: গরমে ঠান্ডা বেলের শরবতে প্রাণ জুড়ায়। দীর্ঘমেয়াদি আমাশয় ও ডায়রিয়ায় কাঁচা বেল ভালো ফল দেয়। অধিক আঁশ থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের জন্য উপকারী। বেল ত্বকের ব্রণ ও সংক্রমণ সারাতে সাহায্য করে।

জামরুল, সফেদা, গাব, আনারস ইত্যাদি গ্রীষ্মকালীন ফলও নানা পুষ্টিগুণে ভরা।

সতর্কতা

  • কাঁঠাল খুব সহজপাচ্য নয়। বেশি খেলে গ্যাস বা হজমজনিত সমস্যা হতে পারে।

  • গ্যাসট্রিক ও পেটের সমস্যায় লিচু কম খাওয়াই ভালো।

  • কিডনি রোগীরা কাঁঠালের বিচি, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফল যেমন তরমুজ এড়িয়ে চলবেন।

  • ডায়াবেটিস রোগীরা যদি মিষ্টি ফল বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলেন, তবে সেদিন অন্যান্য শর্করা ৫০ ভাগ কমিয়ে ফেলবেন।

ফাহমিদা হাসেম, জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল