গর্ভকালে একজন মায়ের ওজন ১১ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। তবে এ ওজন বৃদ্ধি একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হয়। এটা নির্ভর করে গর্ভধারণের আগে মায়ের ওজন কেমন ছিল, তার ওপর।
বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) হলো উচ্চতা আর ওজনের অনুপাত। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির আদর্শ বিএমআই হলো ১৮ দশমিক ৫ থেকে ২৪ দশমিক ৯। যাঁদের বিএমআই ১৯-এর কম, তাঁদের ক্ষেত্রে ওজন ১৭ কেজি পর্যন্ত বাড়লেও তা স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। যাঁদের বিএমআই ২৫-এর বেশি, তাঁদের ৭ কেজি ওজন বাড়লেই তা যথেষ্ট মনে করা হয়।
গর্ভকালীন ৯ মাসকে ৩ ভাগে ভাগ করে ওজন বৃদ্ধির আদর্শ মাত্রা—
প্রথম ত্রৈমাসিকে সামগ্রিকভাবে ০.৫-২.৫ কেজি
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে প্রতি সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি
তৃতীয় ত্রৈমাসিকে প্রতি সপ্তাহে ১৫০ গ্রাম থেকে ১ কেজি
গর্ভকালে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-একলাম্পসিয়া, প্রিম্যাচিউর প্রসবের ঝুঁকি বাড়ে। তা ছাড়া প্রসবের সময় এবং প্রসব-পরবর্তী আরও
নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। আবার কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে কম ওজন বাড়লে গর্ভের শিশুর ওজন কম ও আকারে ছোট হতে পারে। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রসব হতে পারে। শিশুর জন্মগত ত্রুটি হতে পারে।
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ওজন খুব একটা বাড়ে না। এ সময় অরুচি, বমি ভাব দেখা দেয়। বমির কারণে ঠিকমতো খেতে পারেন না অনেকে। গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহ পর থেকে ওজন বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। এ সময় গর্ভের শিশুর ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে। শিশুকে বুকের দুধ দেওয়ার শারীরিক প্রস্তুতি হিসেবে মায়ের শরীরে জমতে শুরু করে অতিরিক্ত চর্বি। এতে হরমোনের প্রভাবও আছে।
সুস্থ মা ও সুস্থ স্বাভাবিক শিশুর জন্য গর্ভকালে মায়ের সঠিক ওজন বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রয়োজন। সময় অনুযায়ী মায়ের ওজন বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। আদর্শ ওজন বৃদ্ধির জন্য নিচের বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে—
সন্তান ধারণের আগে বিএমআই অনুযায়ী আদর্শ ওজন ধরে রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় সুষম পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে হবে।
প্রচুর আঁশজাতীয় খাবার, যেমন লাল আটার রুটি, গম, ওটস খান।
প্রোটিন–জাতীয় খাবার, যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, সয়া বেশি খান।
পর্যাপ্ত পরিমাণ সবুজ শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে।
প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
বাইরের জাঙ্ক ফুড বা অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে পুষ্টিকর, ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার থেকে হবে।
অতিরিক্ত তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার খাবেন না।
একবারে বেশি করে না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।
নিয়মতি হাঁটাহাঁটি, হালকা ব্যায়াম করুন।
প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।