প্রতিদিনের রুটিনে নিয়ম করে বিভিন্ন ধরনের মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম (হাঁটা, সাঁতার, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ) করতে হবে।
গর্ভকালে নারীদের বিভিন্ন ধরনের শারীরবৃত্তীয় ও হরমোনের পরিবর্তন দেখা দেয়। এর মধ্যে হরমোনের উচ্চমাত্রাসহ কিছু ঝুঁকির কারণে কারও কারও ডায়াবেটিস হতে পারে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের একটি প্রধান কারণ অতিরিক্ত ওজন। গর্ভধারণের আগে মায়ের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয় পরিবারে কারও ডায়াবেটিসের ইতিহাস, আগের সন্তান ধারণের সময় ডায়াবেটিসের ইতিহাস, পলিসিস্টিক ওভারি, প্রি–ডায়াবেটিস, কায়িক শ্রমের ঘাটতি ইত্যাদি। তবে শুরু থেকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসে সহজেই এই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। আসুন, এ উপলক্ষে জেনে নেওয়া যাক গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধের কৌশলগুলো।
সাধারণত সন্তানধারণের ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দেয়। সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে গর্ভস্থ শিশু ও মা দুজনেরই শারীরিক নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের পর এই সুগার আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। যদিও পরবর্তীকালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েই যায়।
গর্ভকালে খুব কঠোর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ, এ সময় মায়েদের অতিরিক্ত ক্যালরি দরকার। চাই সঠিক পুষ্টিও। কাজেই খাবারের ধরন বা পছন্দ পাল্টাতে হবে। সে কারণে সবচেয়ে ভালো হয় ক্যালরি হিসাব করে সঠিক মাত্রায় শর্করা, আমিষ, চর্বি ও ভিটামিন–মিনারেলসসহ একটি পূর্ণাঙ্গ খাদ্যতালিকা করা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধাপে ধাপে এই ক্যালরির মাত্রাও পরিবর্তন করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীরা প্রতিদিন কমপক্ষে তিনবার স্বল্প থেকে মাঝারি পরিমাণে খাবার খাবেন। সেই সঙ্গে দুই থেকে চারবার হালকা খাবারও খাবেন। খাবারে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান সুষমভাবে থাকতে হবে।
রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে দৈনিক খাদ্যতালিকায় আঁশসমৃদ্ধ খাবার যোগ করতে হবে। যেমন হোল গ্রেইন (সম্পূর্ণ শস্য), তাজা শাকসবজি, ফল ইত্যাদি। সরল শর্করার (যেমন যেকোনো চিনি বা মিষ্টিযুক্ত খাবার কিংবা গ্লুকোজসমৃদ্ধ খাবার, সাদা রুটি বা চাল) পরিবর্তে জটিল শর্করা যেমন লাল আটা, লাল চাল, ওটস, গোটা শস্য বেছে নিতে হবে। প্রতিদিনের খাবারে ১০ গ্রাম করে আঁশসমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়ালে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৬ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। একই সঙ্গে মায়ের পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হবে।
জটিল শর্করার পাশাপাশি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের পুষ্টিকর প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। এর মধ্যে মাছ, মুরগি, ডিম, টফু, বিনস, শুঁটি জাতীয় খাবার উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি ক্যালসিয়াম–সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, বাদাম, পালংশাক, ছোট মাছসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। এ ছাড়া অসম্পৃক্ত চর্বিসমৃদ্ধ খাবার যেমন অলিভ অয়েল, পিনাট অয়েল, অ্যাভোকাডো, সামুদ্রিক মাছ (স্যালমন, সারডিন, টুনা), চিয়া সিডস ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে।
যেসব খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যধিক বাড়িয়ে দিতে পারে, সেগুলো এ সময় এড়িয়ে চলতে হবে। প্রক্রিয়াজাতকৃত চিনিযুক্ত খাবারও এড়ানো উচিত। এ ধরনের খাবারের মধ্যে কেক, কুকিজ, ক্যান্ডি, আইসক্রিম, পেস্ট্রি, কোমল পানীয় ইত্যাদি অন্যতম। এ ছাড়া স্টার্চ (শ্বেতসার) জাতীয় খাবার (যেমন সাদা আলু, সাদা ভাত, সাদা পাউরুটি) রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতিদিনের রুটিনে নিয়ম করে বিভিন্ন ধরনের মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম (হাঁটা, সাঁতার, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ) করতে হবে। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রাও ঠিক থাকবে।
ফারজানা শবনম, নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়েট কনসালটেন্ট , লেজার মেডিকেল সেন্টার লি., গুলশান শাখা