বিশ্বের যেসব দেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার বেশি, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে প্রায় ১০ শতাংশ নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
বয়স ৩০ বছরের বেশি; অতিরিক্ত ওজন; পরিবারে ডায়াবেটিস; আগে অধিক ওজনের (চার কেজি বা বেশি) সন্তান অথবা ত্রুটিযুক্ত সন্তান জন্মদান; বারবার সন্তান নষ্ট হওয়া বা গর্ভপাত; অজ্ঞাত কারণে গর্ভে বা জন্মের পরপরই সন্তান মারা যাওয়ার ইতিহাস; গর্ভথলিতে পানির (অ্যামনিয়াটিক ফ্লুইড) পরিমাণ বেশি; গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন সংক্রমণের লক্ষণ, যেমন তলপেটে ব্যথা, যোনিতে ছত্রাক সংক্রমণ, চর্মরোগ; পূর্ববর্তী গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ইতিহাস—এগুলোর এক বা একাধিক থাকলে অবশ্যই গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস আছে কি না, তা শনাক্তের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট (ওজিটিটি) করতে হবে। গর্ভের ২৪ সপ্তাহের পর যে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলা হয়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে মায়ের খিঁচুনি হতে পারে। সময়ের আগে প্রসববেদনা শুরু বা অপরিণত সন্তান প্রসবের ঝুঁকি থাকে। গর্ভথলিতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ঘন ঘন সংক্রমণ হওয়া ও এর কারণে সময়ের আগেই পানি ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রসব-পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে গর্ভের সন্তানের ওজন অনেক কম অথবা অনেক বেশি হতে পারে। জন্মের পর সন্তানের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গিয়ে খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট ও দেহে তাপমাত্রা বজায় রাখার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে যায়।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার বড়ির পরিবর্তে ইনসুলিনের ব্যবহার নিরাপদ ও অধিক কার্যকর। গর্ভধারণের আগে থেকে ডায়াবেটিস থাকলে আগেই ওষুধ পরিবর্তন করে চিকিৎসকের পরামর্শে ইনসুলিন শুরু করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে শুধু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত হালকা হাঁটতে হবে বা ব্যায়াম করতে হবে।
আগামীকাল পড়ুন: লিভার কেন বড় হয়?