খুক খুক কাশি

বুকে ঘড় ঘড় নেই, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নেই—কিন্তু যখন-তখন খুক খুক কাশি। বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক একটি ব্যাপার। একে বলা হয় শুকনো কাশি। যার অর্থ, কাশির সঙ্গে কখনো কফ বেরোয় না, কিন্তু একটা অস্বস্তি গলায়-বুকে লেগেই থাকে। শীতকালে আরও খারাপ অবস্থা। কেন এমন হয়?

লক্ষ করুন, কাশিটা কি নতুন, না এর আগেও প্রায়ই জ্বালিয়েছে আপনাকে? মৌসুম বদলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে কি না। এমন যদি হয় যে শীতে, ঠান্ডায়, গরমে, বর্ষায় বা ধুলাবালুতে এর প্রকোপ বেড়ে যায়, তবে ধরে নিতে পারেন যে এটি অ্যালার্জিজনিত। চিন্তা করে দেখুন, আপনার বাড়িতে বা কাজের পরিবেশে এমন কিছু আছে কি না, যা অ্যালার্জির প্রকোপ বাড়ায়। যেমন: হয়তো ধুলোমাখা কার্পেট, আলো-বাতাসহীন ভ্যাপসা ঘর, এমনকি পোষা প্রাণী, পাখি বা ফুলগাছের রেণু।

হয়তো ঘরের শীতাতপনিয়ন্ত্রণের যন্ত্রই আপনার সহ্য হয় না অথবা সইতে পারেন না বেশি গরম ও ঘাম। শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায়ও অনেকের কাশি বাড়ে। পরিবারে বা বংশে হাঁপানি বা অ্যালার্জির ইতিহাস আছে কি না।

এ ছাড়া একধরনের হাঁপানিই আছে, যেখানে শ্বাসকষ্ট না হয়ে স্রেফ খুক খুক কাশি দেখা যায়; একে বলে কফ ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা। যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন, তবে হয়তো স্মোকার কফ বা ধূমপায়ীদের কাশি হচ্ছে। তামাক শ্বাসঝিল্লিকে ক্রমাগত ব্যাহত করছে বলেই কাশি উঠছে। খেয়াল করুন, স্বাভাবিক সময়ের কাশির চেয়ে এই নতুন কাশি একটু অন্য ধরনের কি না। কিংবা হঠাৎ তীব্রতায় বা ধরনে পাল্টে গেছে কি না। কারণ, ধূমপায়ীদের কাশি হঠাৎ আচরণ পরিবর্তন করলে একটু সতর্ক হতে হবে। ফুসফুসের ক্যানসার ধূমপায়ীদেরই বেশি হয়।

যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের বছরে কয়েকবার কাশি-শ্বাসকষ্ট-জ্বর মিলিয়ে অসুস্থতা হতে পারে। কারণ, তাঁরা ক্রনিক ব্রংকাইটিসে ভুগে থাকেন। এটি জটিলতর রূপ নেবে ক্রমেই। তাই যথাসময়ে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করুন। এক মাসের বেশি সময় ধরে কাশি, সঙ্গে ঘুসঘুসে জ্বর, ওজন হ্রাস, অরুচি, কাশির সঙ্গে রক্ত ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যক্ষ্মা বা ক্যানসারের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

অ্যাসিডিটির কারণেও অনেক সময় কাশি হয়। পাকস্থলীর অ্যাসিড ওপর দিকে উঠে এলে কাশি উঠতে পারে। যাঁদের সব সময় সর্দি লেগে থাকে, তাঁদের নাকের পেছন দিকে ইরিটেশন হয় বলে কাশি হতে পারে, একে বলে পোস্ট নাসাল ড্রিপ। এ ছাড়া কিছু ওষুধ অনেক সময় কাশির জন্য দায়ী হতে পারে। হৃদ্‌রোগের কারণেও অনেক সময় কাশি হয়। তাই শুকনো কাশিকেও গুরুত্ব দিন ও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।