খাবারে বাড়তি লবণ নিষেধ কেন

অতিরিক্ত লবণ খেলে নিয়ন্ত্রণহীন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। হৃদ্‌যন্ত্র, রক্তনালি, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য উপাদান লবণ। শরীরের স্বাভাবিক গঠন ও কার্যকলাপের জন্য লবণ খাওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া শরীরের জলীয় অংশের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ, স্নায়ু ও মাংসপেশির স্বাভাবিক কার্যক্রম চালনা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে লবণ। তবে রয়েছে ঝুঁকিও। অতিরিক্ত লবণ খেলে নিয়ন্ত্রণহীন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় হৃদ্‌যন্ত্র, রক্তনালি, কিডনি, মস্তিষ্ক ও চোখ দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ জন্য বাড়তি লবণ খাওয়া এড়ানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়, রান্নায় কতটুকু লবণ ব্যবহার করা উচিত। খাবার টেবিলে লবণ ব্যবহারের নিয়ম কী হবে?

বিপদের কারণ সোডিয়াম ক্লোরাইড

রান্নায় যে লবণ ব্যবহার করা হয়, তা সোডিয়াম ক্লোরাইড। লবণের ৪০ শতাংশ জুড়ে থাকে সোডিয়াম। যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, কিডনি ও যকৃতের সমস্যা আছে; তাঁদের এ সোডিয়াম এড়িয়ে চলতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম খাওয়া যাবে। সহজ ভাষায়, প্রতিদিন এক চা–চামচের বেশি লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে।

প্রতিদিন ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম খাই আমরা। এর বড় অংশ আসে প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে। কেননা খাবার সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় এতে প্রচুর লবণ যোগ করা হয়। খাবারে স্বাদ বাড়াতে লবণ ব্যবহার করা হয়। এরপরও অনেকে পাতে বাড়তি লবণ খান।

বেকিং সোডাযুক্ত খাবার (পাউরুটি, বিস্কুট), প্রক্রিয়াজাত মাংস, টিনে সংরক্ষিত খাবার (আচার, পনির), চিকেন ফ্রাই, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, পাস্তা, লবণ মাখানো চানাচুর, বাদাম ইত্যাদি মানবদেহে বাড়তি লবণের বড় উৎস। দেখা যায়, আমরা রান্নায় লবণ কমিয়েছি ঠিকই, কিন্তু কেনা খাবারে অনেক লবণ রয়ে গেছে। সেটা খেয়াল করছি না।

যা করতে হবে

আসলে একেবারে মেপে রান্নায় লবণ ব্যবহার করা যায় না। তেমনি সব সময় খাবার টেবিলও লবণশূন্য রাখা যায় না। তাই চিকিৎসকেরা লবণ খাওয়া কমিয়ে আনতে কিছু পরামর্শ দেন: পাতে লবণ খাওয়া বন্ধ করতে হবে। রান্নায় লবণের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমাতে হবে। বাইরে থেকে কেনা অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। অনেকেই লবণ ভেজে খান। মনে করেন, এতে ক্ষতি কম হয়। এটা করা যাবে না। বিটলবণ, টেস্টিং সল্ট, রকসল্টেও সোডিয়াম আছে। বিকল্প হিসেবে এসব লবণ ব্যবহার নিরাপদ নয়।

লেখকঃ ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল