মুখের ভেতর বা জিভে ঘা সব সময় যে দাঁত ও মাড়ির কারণে হয় তা নয়, এটি হতে পারে দেহের অন্যান্য নানা সমস্যায়ও। ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থা, ছত্রাক সংক্রমণ থেকে শুরু করে ভিটামিনের অভাব বা মানসিক চাপও হতে পারে মুখে ঘায়ের গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
মাড়ির প্রদাহ
মাড়িতে তীব্র প্রদাহ, মাড়ি ফোলা বা পুঁজ জমা, মাড়ি থেকে দাঁত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এবং সামান্য আঘাতে রক্ত বের হয়ে আসা—এসব উপসর্গ থাকলে তাকে আমরা পেরিওডন্টাল ডিজিজ বা মাড়ির রোগ বলে থাকি। মুখের সুস্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখা, দন্তমল, জিনজিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণে এই মাড়ির রোগ বেশি হয়। মূল রোগটি প্রতিরোধ না করলে তাই মুখে ঘায়ের চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয় না।
ছত্রাক সংক্রমণ
যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন ডায়াবেটিস, ক্যানসার, দীর্ঘমেয়াদি রোগ, বিভিন্ন ওষুধ বিশেষ করে স্টেরয়েড, কেমোথেরাপি ইত্যাদি কারণে মুখে ক্যানডিডা নামের ছত্রাক বংশ বৃদ্ধি করে ও এর ফলে মুখে ঘা হয়। হাঁপানির রোগী স্টেরয়েড ইনহেলার ব্যবহার করে মুখ না ধুয়ে ফেললেও ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। এর ফলে রোগী খেতে গেলে জিভ জ্বালা করে, জিভে সাদা আস্তরণ পড়ে। ছত্রাক প্রতিরোধী মলম ও ওষুধ হলো এই সমস্যার চিকিৎসা।
ত্বকের সমস্যা
বিশ্বের প্রথম যে এইডস রোগীটিকে শনাক্ত করা হয়, তার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে ধরা পড়ে মুখের ঘা। যা হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া নামে পরিচিত। এই বিশেষ ধরনের ঘা এইচআইভি সংক্রমণের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ছাড়া সাধারণ লিউকোপ্লাকিয়া, লিকেন প্লেনাস ইত্যাদি ত্বক বা ঝিল্লির সমস্যায় মুখে ঘা হয়।
এপথাস আলসার
মুখে আরও একটি ঘা যেকোনো বয়সেই হতে পারে, যার নাম ‘এপথাস আলসার’। ভিটামিন বি স্বল্পতা, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, মুখের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি এই এপথাস আলসারের কারণ। বেশ বেদনাদায়ক একটি সমস্যা এটি।
ধারালো ও অস্বাভাবিক দাঁত
ক্ষয়ে যাওয়া দাঁতের ধারালো অংশ ক্রমাগতভাবে যদি জিভে বা গালের মাংসে ঘষা খায়, তবে ওই স্থানে ঘা হতে পারে।
মুখের ক্যানসার
মুখের ঘা হতে পারে মুখের ক্যানসারের একটি উপসর্গ। বিশেষ করে ধূমপায়ী বা যাদের জর্দা, তামাক, গুল ইত্যাদি ব্যবহারের অভ্যাস আছে, তাদের বারবার বা দীর্ঘদিন ধরে মুখে ঘা হলে অবশ্যই সচেতন হোন। l দন্ত বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল|