করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে শারীরিকভাবে সেরে ওঠার পরও নানা ধরনের সমস্যায় ভোগেন রোগীরা। অনেকে শারীরিক দুর্বলতা এবং ক্লান্তির অভিযোগ করেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার ধকলে ভীষণ ক্লান্তি, অবসাদ ও দুর্বলতা, কোনো কিছু ভালো না লাগা, কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
কারণ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকে।
এই প্রতিরোধক্ষমতা একপর্যায়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে সক্রিয় হয়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রদাহের সৃষ্টি করে। ফলে নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। ভাইরাস যতটা না ক্ষতি করছে, তার চেয়ে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে যদি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাজ করে, যা ফুসফুসসহ শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আঘাত হানে। একে মাল্টি সিস্টেম ডিসঅর্ডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
সাধারণত দুর্বলতা ও অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠার মতো সমস্যাগুলো থেকে যায়। শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে ব্যথা, অবসাদ এবং ক্লান্তি ভাব হয়।
রোগীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, লিঙ্গ ও বয়সভেদে একেকজনের লক্ষণ একেক মাত্রার হতে পারে।
তবে আগে থেকেই যাঁরা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত, তাঁদের বিভিন্ন অঙ্গ ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
ফুসফুসের দুর্বলতার কারণে দেখা যায়, রোগীরা অল্পতেই খুব হাঁপিয়ে ওঠেন। ভীষণ দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ কাজ করে।
অনেকের শ্বাসকষ্ট ও কাশির সমস্যা দীর্ঘ সময় থেকে যায়। আবার যাঁরা আগে থেকে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসে প্রদাহজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কোভিড হলে ফুসফুস দ্রুত আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
আবার যেসব রোগীর আইসিইউ বা জরুরি অক্সিজেন নিতে হয়েছে, তাঁদের অনেকের ফুসফুসে পালমোনারি ফাইব্রোসিস সমস্যা দেখা দিতে পারে।
করোনাভাইরাসের কারণে রোগীর রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থাকায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
এ কারণে যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন, চিকিৎসকেরা তাঁদের ব্লাড থিনার দিয়ে থাকেন, যেন রক্ত পাতলা থাকে।
যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছেন এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়, তাঁরা করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পরও বড় ধরনের ঝুঁকিতে থাকেন।
করোনাভাইরাসের কারণে কিডনিতে সমস্যা না হলেও, ডায়ালাইসিস ও উচ্চ মাত্রার ওষুধ সেবনের কারণে রোগীর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়ে পড়ে।
ফলে রক্তে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্যহীনতা বা ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স, অ্যাসিড-বেসড ডিসঅর্ডার ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেয়। ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হলে যকৃৎ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর পরিস্থিতি জটিল পর্যায়ে পৌঁছালে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনিয়ন্ত্রিতভাবে সক্রিয় হয়ে উঠলে এটি ফুসফুসের দেয়ালে প্রদাহের সৃষ্টি করে, ফুসফুসে পানি জমে যায়। অনেকেরই বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা কিংবা হৃৎপিণ্ডের প্রদাহজনিত সমস্যা মায়োকার্ডাইটিস দেখা দিয়েছে।
এ রকম পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ সুস্থতার দ্রুত উপায় হলো, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিনের রুটিনে কিছু পরামর্শ মেনে চলা। চলুন জেনে নেওয়া যাক কী কী বিষয়ে সচেতন হলে খুব সহজেই এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
* কোভিডের ধকলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই হালকা ব্যায়াম দিয়ে ফিটনেস চর্চা শুরু করতে হবে। ধীরে হাঁটা, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং ধ্যান বা মেডিটেশন দিয়ে শুরু করতে পারেন। ধীরে ধীরে প্রতিদিন শরীরচর্চা করলে শরীর ও মন উভয়েই উপকৃত হবে। কঠিন ব্যায়াম দিয়ে শরীরচর্চা শুরু করবেন না, এমন ব্যায়ামে অভ্যস্ত হোন, যা আপনার কাছে সহনীয় মনে হয়।
* প্রতিদিন সকালে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে সময় কাটান।
* একটি খেজুর, কিছু কিশমিশ, দুটি কাজুবাদাম, দুটি আখরোট পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খান।
* হালকা ও সহজে হজম হয়, এমন খাবার খান। অতিরিক্ত চিনি, ভাজা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
* মাঝেমধ্যে খিচুড়ি রান্না করে খান।
* সপ্তাহে ২-৩ বার শজনেপাতার স্যুপ উপকারী।
* দিনে দুইবার জিরা-ধনে-মৌরির চা পান করুন, খাবার খাওয়ার ১ ঘণ্টা পর।
* সঠিক ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন। প্রচুর পানি ও তরল পান করুন।
* প্রতি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমান। যত ভালো ঘুমাবেন, তত দ্রুত নিরাময় লাভ করবেন।