কোনো কারণে ওষুধ খেলেন, তারপর থেকে পেটটা মোচড় দিয়ে উঠছে, মনে হচ্ছে বারবার টয়লেটে যেতে হবে, পাতলা পায়খানাও শুরু হয় অনেকের। অনেকে আছেন কোনো ওষুধই যেন পেটে সয় না, পেট নরম হয় বা ফেঁপে যায়। এসব ক্ষেত্রে কী করবেন? যে রোগের কারণে ওষুধ শুরু করা, তারও তো সুরাহা চাই।
■ মুখে খাওয়ার যেকোনো ওষুধই পাকস্থলী ও অন্ত্রে শোষিত হয় এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যকৃতে গিয়ে ভাঙে। খানিকটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সব ওষুধেরই আছে। তাই সামান্য পেট ফাঁপা, গ্যাস হওয়া বা একটু পেট নরম হওয়াকে অত আমল না দিলেও চলবে। বিশেষ করে যদি ওষুধটা স্বল্পমেয়াদি হয়। যেমন নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ডায়রিয়া বা পেট খারাপ করতে পারে। বিটা ল্যাকটেম, পেনিসিলিন, সেফালোস্পোরিন গোত্রের বেশির ভাগ অ্যান্টিবায়োটিকে ডায়রিয়া হতে পারে। যদি তাই করে, তাহলে মাঝপথে হঠাৎ ওষুধ বন্ধ না করে দিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনি সেটা পাল্টে দিতে পারেন, অথবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন।
■ দীর্ঘদিন বা বারবার অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা হলে অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। তখন সাধারণ জীবাণুগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এতে ডায়রিয়া হতে পারে। একে অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাসোসিয়েটেড ডায়রিয়া বলা হয়। হাসপাতালে এটা বেশ বড় রকমের সমস্যা। এ সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সব ওষুধ বন্ধ করে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
■ কেমোথেরাপি নেওয়া হলে বমি, ডায়রিয়া হওয়াটা স্বাভাবিক। এসব ক্ষেত্রে মূল রোগের চিকিৎসা বেশি জরুরি। তাই কেমোথেরাপি বন্ধ না করে স্যালাইন দিয়ে বা বমি ডায়রিয়া বন্ধ করার ওষুধ দিয়ে হলেও থেরাপি চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
■ কখনো কখনো দীর্ঘ মেয়াদে খেতে হবে এমন ওষুধ, যেমন ডায়াবেটিসের জন্য মেটফরমিন বা ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ওষুধ কলচিসিনে রোগীর প্রচণ্ড ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। এ রকম হলে চিকিৎসককে বলে ওষুধ পরিবর্তন করে অন্য গোত্রের ওষুধ সেবন করাই শ্রেয়।
■ অনেকেই জানেন না যে অ্যান্টাসিড ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বেশি সেবন করলেও অন্ত্রে সমস্যা হয় এবং ডায়রিয়া হতে পারে। এমনকি দীর্ঘদিন এসব ওষুধ সেবন করলে ক্লসট্রিডিয়াম সংক্রমণ হতে পারে অন্ত্রে। তাই যাঁরা দিনের পর দিন এ ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা. মৌসুমী মরিয়ম সুলতানা, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুর