তীব্র গরম, বৃষ্টি আর বন্যা। সব মিলিয়ে শিশুদের ডায়রিয়ার প্রকোপ হঠাৎ করেই অনেক বেড়েছে। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এই রোগ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে, তাই বাচ্চাদের ডায়রিয়া প্রতিরোধে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা।
রান্নার ও খাওয়ার পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে। শিশুর জন্য যাঁরা খাবার তৈরি করেন কিংবা শিশুকে যাঁরা যত্ন নেন, তাঁদের অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। একটু বড় বাচ্চাদের নিজে থেকে হাত ধোয়া শেখাতে হবে। বড়দের চেয়ে শিশুদের ডায়রিয়ায় জটিলতা বেশি হয়। শিশুদের শরীরের কোষের বাইরের পানি বা এক্সট্রা সেলুলার ফ্লুইড বেশি। ফলে সহজেই তাদের শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। পানিশূন্যতা তীব্র হলে শিশু অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে তাই পানিশূন্যতার লক্ষণ জানা থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।
পানিশূন্যতা বুঝবেন শিশুর অস্থিরতা ও তৃষ্ণা খুব বেড়ে যাওয়া দেখে, চোখ গর্তে ঢুকে গেলে, শিশুর ত্বক শুষ্ক ও ঢিলে মনে হলে। এ ছাড়া জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া কিংবা যথেষ্ট কান্না করার পরও চোখ দিয়ে পানি না এলে মনে করতে হবে, শিশু পানিশূন্যতায় ভুগছে। আবার শিশু নিস্তেজ হয়ে গেলে কিংবা তার প্রস্রাবের পরিমাণ একেবারে কমে যাওয়াও খুব খারাপ লক্ষণ। যথেষ্ট খাওয়ার স্যালাইন দেওয়ার পরও এমন হতে পারে।
ডায়রিয়া হলে শিশুকে বারবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। যে শিশুদের বয়স দুই বছরের নিচে, তাদের প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ১০ থেকে ২০ চামচ, দুই বছরের বেশি বয়সীদের প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ২০ থেকে ৪০ চামচ এবং বমি হলে ১০ মিনিট অপেক্ষার পর আবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
সব বয়সের জন্য স্যালাইন বানানোর নিয়ম কিন্তু একই, বয়স কম বলে আধা প্যাকেট বা কম পানিতে গুলিয়ে স্যালাইন বানানো যাবে না। অনেকেই মনে করেন স্যালাইন বোধ হয় ডায়রিয়ার কোনো ওষুধ, তা কিন্তু নয়। ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতে এর সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই, তবে ডায়রিয়ার কারণে যে পানিশূন্যতা হয়, তা কমায় খাওয়ার স্যালাইন। মা স্যালাইন খেলে বাচ্চার কিন্তু কোনো লাভ হবে না। ৫ থেকে ৭ দিনে শিশুর ডায়রিয়া এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আর কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তবে শিশুদের ডায়রিয়ায় তীব্র জ্বর থাকলে বা মলের সঙ্গে রক্ত গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে।
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুকে ডাবের পানি, ভাতের মাড় ইত্যাদি দিতে পারেন। তবে বাজারের কোমল পানীয়, জুস, বেশি চিনিযুক্ত চা কিংবা কফি দেওয়া যাবে না। স্বাভাবিক সব খাবার খাওয়ানো যাবে। শিশুকে মায়ের দুধ অবশ্যই দিয়ে যেতে হবে। অল্পবয়সী শিশুর ডায়রিয়া হোক বা না হোক, তাকে মায়ের দুধের পরিবর্তে অন্য কোনো দুধ দেওয়া উচিত নয়। আর মায়ের খাওয়াদাওয়ায় কোনো নিষেধ নেই।
এই সময়ে শিশু জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের জ্বর, কাশি কিংবা গলা ব্যথা থাকলে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে যাওয়া উচিত। করোনায় আক্রান্ত হলে অনেক শিশুরই কাশি থাকে না আবার গলাব্যথার কথা তারা বলতেও পারে না, এসব ক্ষেত্রে শিশুদের শুধু জ্বর ও ডায়রিয়া থাকে। তাই এ বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
তবে সাধারণভাবে শিশুদের বেশির ভাগ ডায়রিয়া রোটা ভাইরাস বা অন্যান্য ভাইরাসজনিত। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া উচিত নয়। স্যালাইন ও জিঙ্ক ট্যাবলেট দিলে ঘরোয়া চিকিৎসায় এই রোগ ভালো হয়ে যায়। অবশ্য শিশু কিছুই খেতে না পারলে, অনবরত বমি করলে, নিস্তেজ হয়ে পড়লে, মলের সঙ্গে রক্ত গেলে কিংবা ডায়রিয়া ১৪ দিনের বেশি স্থায়ী হলে তাকে হাসপাতালে নিতে হবে।