সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিমি পারদের কম ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০ মিমি পারদের কম হলো স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা। সিস্টোলিক যদি ১৪০ মিমি পারদ বা এর বেশি অথবা ডায়াস্টোলিক যদি ৯০ মিমি পারদ বা এর বেশি হয় কিংবা সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক—দুটিই যদি এই মাত্রার ওপরে থাকে, তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। এর মাঝামাঝি মাত্রায় রক্তচাপ পাওয়া গেলে তাকে প্রাক্-উচ্চ রক্তচাপ বলে।
রক্তচাপ মাপার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে চা, কফি পান বা ধূমপান করা যাবে না। কমপক্ষে পাঁচ মিনিট বিশ্রাম নেওয়ার পর রক্তচাপ মাপতে হবে। পা দুটি মেঝেতে রেখে দুই হাত সামনের টেবিলে অথবা চেয়ারের হাতলে রেখে মাপতে হবে। রক্তচাপ মাপার যন্ত্রটির কাফ কনুইয়ের ভাঁজের এক ইঞ্চি ওপরে বাঁধতে হবে।
এখন অটোমেটেড বা স্বয়ংক্রিয় রক্তচাপ মাপার যন্ত্রও পাওয়া যায়।
প্রাক্–উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও ধূমপান বর্জন যথেষ্ট। রক্তচাপ সাধারণত ১৪০/৯০ মিমি পারদ বা এর ওপরে থাকলে ওষুধের দরকার পড়ে।
উচ্চ রক্তচাপের অনেক ধরনের ওষুধ রয়েছে। কোন ওষুধ কার জন্য সঠিক, তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। হাঁপানি, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ বা অন্য কোনো রোগ থাকলে সে অনুযায়ী ওষুধের ধরন ঠিক করতে হয়।
গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ অনেক ক্ষেত্রে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসে। তখন আর ওষুধ লাগে না।
৫–১০ শতাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের বিশেষ কারণ থাকে। যেমন কিডনি রোগ, হরমোনজনিত রোগ, ব্যথানাশক ও স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধের প্রতিক্রিয়া, হৃদ্যন্ত্রের জন্মগত ত্রুটি, হরমোন নিঃসরণকারী টিউমার ইত্যাদি। ৯০–৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো কারণ থাকে না। এ ধরনের রক্তচাপে সারা জীবন ওষুধ খেতে হয়।
হঠাৎ রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে হৃদ্যন্ত্র, কিডনি, রক্তনালি, চোখ ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। রক্তচাপ ১৮০/১২০ মিমি পারদের ওপরে উঠলে এ রকম আশঙ্কা তৈরি হয়। এ সময় দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, বুকে ব্যথা বা চাপ, শ্বাসকষ্ট, লালচে প্রস্রাব, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাথাব্যথা, শরীরের অংশবিশেষ বা একাংশের দুর্বলতা কিংবা অবশ হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এসব ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
স্বাভাবিক বা একটু কমের দিকে রক্তচাপ পেলে অনেকে ভয়ে ওষুধ বন্ধ করে দেন। এটা ঠিক নয়। ওষুধ বা এর মাত্রা পরিবর্তন করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রক্তচাপ খুব বেশি কমে গেলে (৯০/৬০ মিমি পারদের কম) সে অবস্থাকে নিম্ন রক্তচাপ বলে। এ সময় মাথা ঝিমঝিম, মাথা ঘোরা বা মাথা হালকা বোধ হতে পারে। বসা বা শোয়া থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ালে ভারসাম্যহীন মনে হতে পারে। এ রকম অবস্থা হলে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে।
ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা