এখন আমের ভরা মৌসুম। আম ভালোবাসেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। হোক সে কাঁচা কিংবা পাকা। আমের কদর সর্বত্র। আমের ভেতরের মাংসল ও শাঁসালো অংশটি খেয়ে এর আঁটি আর খোসা আমরা ফেলে দিই। কিন্তু আমের খোসাও যে দারুণ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ, সে কথা খুব কম মানুষই জানে। আমের খোসায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই ও বি৬ এবং পটাশিয়ামের মতো মিনারেল। শুধু তা–ই নয়, আমের খোসা অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট ও ফাইবারেরও দারুণ উৎস। এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে থাকে।
আমের খোসায় রয়েছে ম্যাংগিফেরিন, নরাথাইরল, রেসভেরাট্রল নামের শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট। এসব অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়, স্তন, মস্তিষ্ক ও মেরুরজ্জুর ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ছাড়া আমের খোসায় উপস্থিত ট্রাইটেরপেনেস ও ট্রাইটেরপনয়েডস উদ্ভিজ্জ যৌগও ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
আমের মতো রঙিন ফলগুলোতে রয়েছে ক্রিপটোথ্যান্সজিন নামের ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, যা আমাদের কোষগুলো ও হৃৎপিণ্ডের মধ্যকার যোগাযোগ ভালো রাখে। ফলে হৃৎপিণ্ডের রোগবালাই হওয়ার ঝুঁকি কমে। এ ছাড়া আমের খোসায় থাকা ফাইবারও হৃৎপিণ্ডের অসুখ প্রতিরোধ করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজারের বেশি পুরুষের ওপর করা এক গবেষণায় দেখে গেছে, যাঁদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় উচ্চমাত্রার ফাইবার বা আঁশসমৃদ্ধ খাবার থাকে, তাঁদের হৃৎপিণ্ডের অসুখ হওয়ার আশঙ্কা ৪০ শতাংশেরও কম।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফার্মাসির এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমের খোসার নির্যাস ফ্যাট সেল তৈরি হতে বাধা দেয়। এ ছাড়া আমের খোসার বিভিন্ন উপাদান আমাদের রক্তের সুগার ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। এতে করে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও হ্রাস পায়।
আমের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন সি। এগুলো আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এ ছাড়া আমের খোসায় থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ত্বকে দ্রুত বলিরেখা বা বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
আমের খোসায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ রয়েছে। আর আমাদের খাদ্য হজম ও সুষ্ঠু পরিপাকের জন্য ফাইবারের কোনো বিকল্প নেই। যাদের হজমে সমস্যা হয়, তাদের জন্য আমের খোসা ফেলে না দিয়ে খেয়ে ফেলাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
আমের খোসায় অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট এবং ভিটামিন এ ও সি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খুবই কার্যকর। এ ছাড়া আমের খোসায় থাকা ভিটামিন এ চোখের সুস্থতায় সাহায্য করে এবং রাতকানা ও জেরোপথেলমিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
এ ছাড়া পুষ্টিবিদেরা মনে করেন, আমের খোসার প্রদাহবিরোধী উপাদানগুলো আর্থ্রাইটিস ও আলঝেইমারের মতো রোগের প্রবণতা কমায়।
নানাভাবেই আমের খোসা খাওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় কোনো রকম প্রক্রিয়াজাত না করে খেলে। এভাবে খেলে সম্পূর্ণ গুণাগুণ অটুট থাকে। তবে কেউ চাইলে রোদে শুকিয়ে, হালকা ভেজে বা তাওয়ায় সেঁকেও খেতে পারেন। আবার কাঁচা আমের আচার বানানোর সময় খোসা না ফেলে সেটিসহই আচার বানাতে পারেন।
আমের খোসার নানাবিধ উপকারী দিক থাকলেও এটি গ্রহণের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় আমকে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক স্প্রে করা হয়। তা ছাড়া অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করেন। এসব উপাদান আমের খোসায় দীর্ঘদিন থেকে যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো জৈবিক উপায়ে উৎপন্ন আম খাওয়া, যেখানে কোনো রকম কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। আর বাজারের আমের খোসা খেলেও তার খোসা ভালোভাবে পানিতে ভিজিয়ে রেখে রাসায়নিক ও জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া আমের খোসায় যদি কারও অ্যালার্জি থাকে, তাহলে তার জন্য এটি এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম