পাঠকের প্রশ্ন: মন

দুজনকেই সে ভালোবাসে

মেহতাব খানম
মেহতাব খানম

পাঠকের কাছ থেকে মনোজগৎ, ব্যক্তিজীবন ও সন্তান পালনের মতো সমস্যা নিয়ে ‘পাঠকের প্রশ্ন’ বিভাগে নানা রকমের প্রশ্ন এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম নির্বাচিত একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার

প্রশ্ন: আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রায় ছয় মাস আগে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। সম্পর্কটি কিছুটা প্রতিকূলতার মধ্যে চললেও আমার বিশ্বাস ছিল আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি। কিন্তু বিপত্তি ঘটে কিছুদিন আগে যখন আমি প্রমাণ পাই, মেয়েটি একই সঙ্গে আরও একজন ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে আছে। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করায় সব স্বীকার করে, বলে সে অনুতপ্ত। কিন্তু কী করে এভাবে আরেকটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল, বুঝতে পারছে না। আমাদের দুজনকেই সে ভালোবাসে!

মেয়েটি আমাকে অনুরোধ করেছে অন্য ছেলেটিকে এ ব্যাপারে কিছু না বলতে। আমার মধ্যে এটা নিয়ে তীব্র আবেগ, কষ্ট কাজ করছে। আমি পড়াশোনা ও খাওয়াদাওয়ায় তেমন মনোযোগ দিতে পারছি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ আবেগপ্রবণ এবং নিজেকে উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বলে মনে করি। মনে হচ্ছে আমি যদি এসব ব্যাপার দ্বিতীয় ছেলেটিকে জানাই, তবে আমার কিছুটা প্রশান্তি হবে। কিন্তু সেটা তাদের দুজনের জন্য অশান্তির কারণ হবে। আমি এটা করতে পারি না, কারণ আমার মধ্যে তীব্র আবেগ কাজ করলেও তা আমার ব্যক্তিত্বকে অতিক্রম করতে পারে না (কিন্তু আমি শঙ্কিত, কতক্ষণ এটা ধরে রাখতে পারব)। এ ছাড়া আমি মেয়েটাকে সত্যি ভালোবাসি এবং তার মঙ্গল কামনা করি। এ অবস্থায় আমি এবং ওই মেয়েটি নিজ নিজ জায়গা থেকে কী করতে পারি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: এ ধরনের একটি অভিজ্ঞতা তোমাকে যে কতটা কষ্টের ভেতরে ফেলে দিয়েছে তা বুঝতে পারছি। নিজেকে হয়তোবা প্রতারিত ও খুব অসম্মানিত মনে হচ্ছে। তুমি যদি ব্যাপারটা জানতে না পারতে, তাহলে মেয়েটি হয়তো আরও অনেক দিন দুটি সম্পর্কই চালিয়ে যেত। তুমি জানার পর সে অনুতপ্ত হলো ঠিকই, কিন্তু তোমাকে আবার সেই ছেলেকে কিছু না জানাতে অনুরোধ করল। এতে যে তোমার মনের যন্ত্রণা আরও বেড়ে যেতে পারে, সেই ব্যাপারটিও সে বুঝতে পারল না।

মেয়েটি দুজনকেই একসঙ্গে ভালোবাসে, কথাটি জেনে মনে হচ্ছে, সে কেবল নিজের আবেগের জায়গাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে যৌক্তিক ও নৈতিকভাবে এটি কিন্তু মোটেও সমর্থনযোগ্য নয়। অন্য ছেলের সঙ্গে তোমার ভালোবাসার মানুষটি পরে জড়িয়েছে নাকি আগেই তার সঙ্গে সম্পর্ক চলছিল, সেটি স্পষ্ট হতে পারিনি। তবে এটি স্পষ্ট যে সে তোমাদের দুজনের সঙ্গেই প্রতারণা করছে। হতে পারে যে মেয়েটির মধ্যে ভালোবাসা ও অন্যের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার চাহিদা তীব্রভাবে রয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাক্‌–শৈশবের সময়ে চারপাশের শিশুযত্নকারীরা যদি শিশুর ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিরাপত্তাবোধের চাহিদাগুলো সময়মতো পূরণ করতে না পারে, তাহলে বড় হওয়ার পর আবেগীয়ভাবে অন্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার প্রবণতা বেড়ে যায়।

মেয়েটিকে তুমি স্পষ্টভাবে প্রশ্ন করতে পারো যে সে কী কারণে দ্বিতীয় ছেলেটিকে এই ব্যাপারে কিছু বলতে নিষেধ করেছে। এ ছাড়া এ–ও পরিষ্কারভাবে বলা যেতে পারে যে, সে যে একই সঙ্গে দুটি সম্পর্ক রাখছে এবং তোমাকে এ ব্যাপারে কিছু শেয়ার করতে বাধা দিচ্ছে, তাতে তুমি কতটা ক্ষতবিক্ষত হচ্ছো। সেই ব্যাপারে তার কোনো ধারণা কি আদৌ আছে?

তুমি মেয়েটিকে এ–ও জানিয়ে রাখতে পারো, দ্বিতীয় সম্পর্কের মানুষটির সঙ্গে তার এই দ্বৈত সম্পর্কের বিষয় জানাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ তোমার কষ্ট ও অপমানবোধ বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তুমি ওকে বলো, ব্যক্তিগতভাবে নিজের কষ্ট লাঘবের জন্য হলেও ছেলেটিকে ঘটনা জানিয়ে দেওয়ার অধিকার অবশ্যই রাখো। একই সঙ্গে সেই ছেলে যে প্রতারিত হচ্ছে, সেটি জানার অধিকার তারও রয়েছে। এরপরে ছেলেটিও এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এর চেয়ে ভালো হতো, যদি তোমার প্রেমিকা সেই ছেলের কাছে অকপটে তার অনৈতিক আচরণের বিষয়টি স্বীকার করত। তুমি সময় নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবতে শুরু করো। তবে তার আগে নিজের শরীরের যত্ন নেওয়ার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য তোমার ভালোলাগার কাজগুলো করো। নিজেকে আরও বেশি ভালোবাসার চেষ্টা করো। অস্থিরচিত্তে থাকার সময় কোনো বড় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না।

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।

ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন

২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫।

(খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA