অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

আপেল বনাম পেয়ারা

পেয়ারা ও আপেল অত্যন্ত জনপ্রিয় দুটি ফল। পেয়ারা আমাদের দেশের সব এলাকাতেই হয়ে থাকে। এমনকি আমরা আমাদের বাড়ির ছাদে অথবা বারান্দায় পেয়ারাগাছ লাগাতে পারি। যেহেতু আপেল আমাদের দেশীয় ফল নয়, তাই সারা বছর আপেল কিনেই খেতে হয়। উভয় ফলই সুস্বাদু এবং আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

আপেল ও পেয়ারার পুষ্টি উপাদানে যথেষ্ট সামঞ্জস্য রয়েছে। অনেকে একটির চেয়ে আরেকটিকে এগিয়ে রাখেন পুস্টিগুণে। যদিও তা খুব একটা যৌক্তিক নয়।
১. আপেল ও পেয়ারাতে খাদ্যআঁশের পরিমাণ অনেক বেশি এবং ক্যালরির পরিমাণ কম। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে দুটি ফলই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. খাদ্যআঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আপেল ও পেয়ারা দারুণ কার্যকর।
৩. খোসাসহ ফল থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়, যা আমাদের ভিটামিন সি-এর দৈনিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।
৪. এ দুটি ফলই শ্বাসতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে এবং অ্যাজমা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৫.  পেয়ারা ও আপেলে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের হাড়ের সুস্থতা রক্ষা করে।
৬. গবেষণায় দেখা গেছে, আপেলের রস স্মৃতিশক্তি ও স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষায় সাহায্য করে।
৭. দুটি ফলেই পলিফেনল নামের একধরনের উপাদান থাকে, যা স্নায়ুতন্ত্রের জন্য উপকারী। এ ছাড়া পলিফেনল রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে; সেই সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেও সহায়তা করে।
৮. প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৯. পেয়ারায় ভিটামিন বি-থ্রি ও ভিটামিন বি-সিক্স থাকে, যা মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়।
১০. খোসাসহ ফল থেকে ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা গর্ভবতী মায়ের রক্তাল্পতা দূর করে এবং ভ্রূণের মস্তিষ্কের সঠিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
১১. দুটি ফলেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
১২. আপেল ও পেয়ারায় ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বকস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এ ছাড়া ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।

আপেল ও পেয়ারার পুষ্টিগুণের তুলনামূলক চিত্র

আপেল ও পেয়ারার স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে বলা হয়েছে। এবার এর পুষ্টি জানানো যাক। প্রতি ১০০ গ্রামে আপেল ও পেয়ারার তুলনামূলক চিত্র:

পুষ্টি উপাদান পেয়ারা আপেল
ক্যালরি ৬৮ ৫২
ফ্যাট ০.৪ গ্রাম ০.২ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ১৪ গ্রাম ১৪ গ্রাম
প্রোটিন ২.৬ গ্রাম ০.৩ গ্রাম
ডায়েটারি ফাইবার ৫ গ্রাম ২.৪ গ্রাম
চিনি ৯ গ্রাম ১০ গ্রাম
ভিটামিন এ ৬২৪ আইইউ ৫৪ আইইউ
ভিটামিন সি ২৮.৩ মিলিগ্রাম ৪.৬ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.৩ মিলিগ্রাম ০.১ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ৪১৭ মিলিগ্রাম ১০৭ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম ৬ মিলিগ্রাম

তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা যায়, পেয়ারা ও আপেলে অধিকাংশ পুষ্টি উপাদানের সামঞ্জস্য রয়েছে। তবে আপেলের তুলনায় পেয়ারাতে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক গুণ বেশি। আপেলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁদের খাদ্যতালিকায় আপেলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর যাঁদের পটাশিয়াম লেভেল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, তাঁদের জন্য পেয়ারা কম খাওয়াই ভালো।

তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি বা দুটি আপেল অথবা পেয়ারা রাখা হলে তা আমাদের ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে।

লেখক: পুষ্টিবিদ, লেকসিটি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, খিলক্ষেত, ঢাকা