রোগবালাই যেমন আছে, তেমনি আছে উপশমের উপায়। স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন রোগ নিয়ে পাঠকদের পাঠানো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।
আমার মুখে অজস্র ব্রণ। মুখের সম্পূর্ণ অংশেই ব্রণ। ব্রণ কমাতে আমাকে কোন কোন জিনিস এড়িয়ে চলতে হবে? আশিক সরকার, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মুখের ত্বক পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন। অতিরিক্ত তৈলাক্ত করে এমন ক্রিম, প্রসাধনী বা লোশন লাগানো থেকে বিরত থাকুন। ভালো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ পরিষ্কার করবেন। প্রচুর পানি পান করবেন। ব্রণের পেছনে নানা হরমোনজনিত কারণও থাকে, আর ব্রণের সুচিকিৎসা রয়েছে। তাই একজন ভালো ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা করুন।
আমার মেয়ের গায়ে ঘামের বেশ দুর্গন্ধ। ওর বয়ঃসন্ধি থেকেই এ সমস্যা লক্ষ করছি। এখন পর্যন্ত কোনো ডাক্তার দেখানো হয়নি। ওর উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, ওজন ৫৯ কেজি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
শরীরের যেসব ভাঁজ বেশি ঘামে, সেসব জায়গা সব সময় পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক রাখতে হবে। নিয়মিত গোসল করার সময় সাবান দিয়ে পরিষ্কার করলে ঘামে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না, আর দুর্গন্ধও হয় না। পাতলা ও হালকা রঙের সুতি কাপড় পরতে হবে। ঘেমে গেলে কাপড় পরিবর্তন করতে হবে। ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া ভালো মানের অ্যান্টিপারসপিরেন্ট ব্যবহার করা যায়।
আমার বয়স ১৮ বছর। এক মাস ধরে আমার হাঁটুর নিচ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত প্রচণ্ড চুলকায়। আগে চুলকালে সাদা কিছু আবরণ উঠত। আমি ভেবেছিলাম রুক্ষতার কারণে এমনটা হয়। কয়েক দিন জলপাই তেল ব্যবহার করায় সাদা আবরণ ওঠা বন্ধ হয় কিন্তু চুলকানি কমেনি। চুলকানির স্থানে তিলের মতো ছোট ছোট কালো দাগ দেখা যেত। কিছুদিন হলো বড় বড় কালো দাগ দেখা দিয়েছে। সেগুলো অল্প চুলকায় কিন্তু প্রচণ্ড জ্বলে। কী করণীয়? অস্মিতা
ত্বক যেন রুক্ষ বা শুষ্ক না হয়, সে জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি বা ভালো ময়েশ্চারযুক্ত লোশন ব্যবহার করবেন। চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করতে পারেন। তবে কেন এত শুষ্ক হচ্ছে, তা জানা দরকার। থাইরয়েড, সোরিয়াসিস, একজিমা বা অন্য অনেক সমস্যার কারণে এমন হতে পারে। তাই স্থায়ী সমাধান পেতে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
পরামর্শ দিয়েছেন—অধ্যাপক মো. আসিফুজ্জামান, বিভাগীয় প্রধান, চর্ম ও যৌন বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
আমার বয়স ১৯ বছর। ৩ দশমিক ৫০ সিলিন্ডার পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করছি। চোখে কেরাটোকোনাস রোগ হওয়ার কারণে ল্যাসিক করা যায়নি। কর্নিয়াল কোলাজন ক্রসলিঙ্কিং অপারেশন করেছি। কিন্তু দিন দিন চশমার পাওয়ার বেড়েই চলেছে। আমার চশমার পাওয়ার কমিয়ে আনার বা একটা নির্দিষ্ট পাওয়ারে এনে থামিয়ে দেওয়ার উপায় আছে কি? মাহির, ঢাকা
কেরাটোকোনাস থাকলে আপনি যে অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, অর্থাৎ কর্নিয়াল কোলাজেন ক্রসলিঙ্কিং অপারেশন, সেই সিদ্ধান্ত ঠিকই আছে। তবে এর মানে এই নয় যে সব ক্ষেত্রেই কোলাজেন ক্রসলিঙ্কিং অস্ত্রোপচার শতভাগ সফল হবে। সাধারণত কেরাটোকোনাসজনিত পাওয়ার স্থিতাবস্থায় আসতে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়স অবধি সময় নিতে পারে। এমন অবস্থায় আপনাকে চশমা ব্যবহার করেই চলতে হবে। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তর চোখের পাওয়ার পরীক্ষা করে চশমা পাল্টাতেও হবে। নিয়মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়াই হবে আপনার জন্য যুক্তিযুক্ত।
পরামর্শ দিয়েছেন—ডা. মো. ছায়েদুল হক, চক্ষুবিশেষজ্ঞ।
আমার বয়স ২০ বছর। মলত্যাগের সময় প্রায়ই মলদ্বার দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়তে থাকে। বিশেষ করে যখন কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো হয় তখন বেশি হয় এটা, সঙ্গে যন্ত্রণা। কিছুদিন পর আবার ঠিক হয়ে যায়। সমাধান কী? পলাশ কুমার দাস, রংপুর
সমস্যা শুনে বোঝা যাচ্ছে যে আপনার মলদ্বারে হেমোরয়েড বা ফিস্টুলা হয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়িয়ে চলবেন। আপনি খাবার তালিকা এমনভাবে ঠিক করবেন যাতে মল নরম থাকে। যেমন: বেশি শাকসবজি, পেঁপে, পাতলা ডাল, ঝোল তরকারি ইত্যাদি খাবেন। এড়িয়ে চলুন গরু-খাসির মাংস, চিংড়ি, সেদ্ধ ডিম, ভাজাপোড়া ইত্যাদি। যখন রক্তপাত হয় তখন চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধ সেবন করে রক্তপাত বন্ধ করতে হবে। তবে স্থায়ী চিকিৎসার জন্য একজন কোলোরেক্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে পারেন।
পরামর্শ দিয়েছেন—অধ্যাপক ডা. শেখ গোলাম মোস্তোফা, টিউমার ও ক্যানসার রোগ বিশেষজ্ঞ, সাবেক পরিচালক, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
আমি একটুও ঝাল খেতে পারি না। ঝাল কিছু খেতে গেলেই চোখ দিয়ে পানি পড়ে, নাক দিয়ে পানি পড়ে, মাথার ত্বক, মুখমণ্ডল ঘেমে একদম একাকার হয়ে যায়। এ নিয়ে খুবই বিব্রতকর এক অবস্থায় আছি। কী করলে আমি ঝাল খেতে পারব? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে কোনো আলসার বা ক্ষত থেকে এমনটি হচ্ছে কি না। দন্তচিকিৎসক ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে মুখের অভ্যন্তরের কোনো কারণ শনাক্ত করলে তার চিকিৎসা দেবেন। অনেক সময় রক্তস্বল্পতা, অপুষ্টি, ভিটামিনের অভাবে ও হরমোনের তারতম্যে এমনটা হতে পারে। ইনহেলার ব্যবহার, জর্দা, গুল, ধূমপান থেকেও ঝাল লাগতে পারে। সাময়িক উপশমের জন্য ঝাল এড়িয়ে চলতে হবে। খাওয়ার পর টক দই, মধু, দুধ, টমেটো, লেবু ইত্যাদি খেলে আরাম পাওয়া যাবে। পানি পানে ঝালের তীব্রতা কমে না।
পরামর্শ দিয়েছেন—ডা. মো. আসাফুজ্জোহা, দন্তবিশেষজ্ঞ, ঢাকা।
আমার বয়স ৩৯ বছর। আমার ব্রঙ্কাইটিস ও বাঁ পাশের ফুসফুসের নিচে ঘা আছে। কফ, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। মাঝেমধ্যে কফের সঙ্গে সামান্য রক্তের ফোঁটা দেখা যায়। বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ দেখিয়েছিলাম। তিনি থোরাসিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ দেখিয়ে অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দেন। আমার প্রশ্ন হলো, দেশে অথবা বিদেশে অস্ত্রোপচার ছাড়া ওষুধের মাধ্যমে রোগটি ভালো হবে কি না? অস্ত্রোপচার করলে একেবারে সেরে উঠব? মো. ইউছুফ, চট্টগ্রাম
আপনার বয়স এবং রোগের ইতিহাস শুনে মনে হচ্ছে, আপনার ব্রঙ্কিয়েকটেসিস হয়েছে। আপনি বুকের এইচআরসিটি স্ক্যান করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শারীরিক পরীক্ষা ও নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের সমন্বয়ে আপনার পরবর্তী চিকিৎসা এবং পরামর্শ নির্ধারিত হবে। আপনি নিশ্চয়ই ভালো হয়ে যাবেন।
পরামর্শ দিয়েছেন—ডা. মোশারফ হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং বক্ষব্যাধি ও খাদ্যনালি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা।
প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা
স্বাস্থ্য জিজ্ঞাসা
ই–মেইল: proshastho@prothomalo.com
ফেসবুক: www.facebook.com/ProShastho
ডাকযোগে: প্র স্বাস্থ্য, প্রথম আলো, ১৯ কারওয়ার বাজার, ঢাকা ১২১৫